কোনও ই–মেলে বা সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও পোস্টে মেয়েদের সম্পর্কে অবমাননাকর কোনও শব্দ ব্যবহার করলে তা ভারতীয় দণ্ডবিধিতে মামলাযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটাই জানিয়েছে বম্বে হাই কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, মহিলাদের অসম্মান করে অনলাইনে কোনও শব্দ ব্যবহার করা যায় না। মৌখিক ভাবে কোনও মহিলাকে অসম্মান করার যে শাস্তি , অনলাইনে অসম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করলেও সেই একই শাস্তি পেতে হতে পারে অভিযুক্তর।
মামলাকারী দক্ষিণ মুম্বইয়ের বাসিন্দা এক যুবক। ২০০৯ সালে তিনি প্রতিবেশী এক মহিলার উদ্দেশে অসম্মানজনক কিছু কথা লিখে ই–মেল করেছিলেন বলে অভিযোগ। ওই মহিলাকে সেই ই–মেল পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগ, পাড়ার অন্যান্যদের কাছেও ই–মেলটি পাঠিয়েছিলেন যুবক। ই–মেলে মহিলার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, যা অপমানজনক বলে মনে করেছেন অভিযোগকারী। যুবকের বিরুদ্ধে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই এফআইআর বাতিল করতে চেয়ে আদালতে যান মামলাকারী। তৎকালীন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।
বিচারকরা জানান, যে সম্বোধনে ই–মেলে লেখা হয় তা নিঃসন্দেহে মানহানিকর এবং সমাজের চোখে বিশেষত যাঁদের কাছে এই মেলের কপি পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের কাছেও ভাবমূর্তি ও সুনামকে ক্ষুণ্ণ করে। বিচারকরা বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে যোগাযোগের বিস্তৃত মাধ্যম খুলে গেছে। এই অবস্থায় আপত্তিকর বিষয়বস্তু সম্বলিত কোনও ই–মেল যখন একজন মহিলার শালীনতাকে ক্ষুব্ধ করে, তখন কি আমরা অপরাধীকে নিঃশব্দে চলে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারি? ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে আইনি নীতির পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।’
বিচারকরা আরও বলেন, ‘আইন হল গতিশীল সমাজের পরিবর্তনশীল চাহিদা। আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যই হল সেটি। একজন মহিলার শালীনতার অনুভূতিকে আঘাত করতে পারে এমন কোনও অপরাধকে রোধ করাই আইনের কাজ। কেবল মৌখিক অসম্মানজনক কথা বা অঙ্গভঙ্গি করাও যেখানে অপরাধ, সেখানে লিখিত শব্দের ব্যবহার তো আরও গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদি তা না হয়, তাহলে অনেকেই ই–মেলে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাধে অপমানজনক শব্দ লিখে মেয়েদের শালীনতা ক্ষুণ্ণ করার সাহস পাবে। আধুনিক প্রযুক্তির আবহে এমনটাই ঘটতে পারে।’ এক্ষেত্রে ৫০৯ ধারায় সাজা পেতে পারেন অভিযুক্ত।
যুবকের আইনজীবী আদালতে জানান, ৫০৯ ধারা অনুযায়ী, কোনও মহিলার বিরুদ্ধে অসম্মানজনক শব্দ উচ্চারণ করলে তা অপরাধ। কিন্তু যুবক আদৌ তেমন কোনও শব্দ ‘উচ্চারণ’ করেননি। তিনি অনলাইনে লিখেছেন মাত্র। এই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে আদালত। যুবকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি বহাল রেখেছে বম্বে হাই কোর্ট।