দেহরাদুর, ৬ ফেব্রুয়ারি– নজির গড়ার পথে পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ড৷ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পথে মঙ্গলবার আরও এক ধাপ এগোল ধামী সরকর৷ বিজেপি শাসিত ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী মঙ্গলবার বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিল পেশ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দ্রুত নয়া বিধি চালু হয়ে যাবে রাজ্যে৷ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি পেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি বিধায়কদের ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিধানসভা৷ এই বিলকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেস৷
বিজেপি সরকারের পেশ করা এই বিল নিয়ে মুসলিম সমাজের একাংশ বিরোধীতা করলেও উত্তরাখণ্ড কংগ্রেসের কোনও অভিযোগ নেই৷ তবে বিল পেশের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাত শিবির৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা হরিশ রাওয়াতের বক্তব্য, বিলের খসড়া বিধায়কদের আগাম দেওয়া হয়নি৷ তাড়াহুড়ো করে সেটি পেশ করা হয়েছে৷ তবে বিলে কংগ্রেসের আপত্তি নেই, সে কথাও জানিয়েছেন রাওয়াত৷
এদিকে, বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন পাশের রাজ্য উত্তর প্রদেশের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি৷ দলের তরফে সাংসদ এসটি হাসান মঙ্গলবার বলেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি পুরোপুরি ইসলাম বিরোধী৷ সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোন্যাল ল’ বোর্ডও৷
হাসান বলেন, মুসলিমদের পক্ষে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি মানা সম্ভব নয়৷ তারা কোরানের উল্লেখিত হিদায়েত বা নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য৷
মুসলিম পারসোন্যাল ল বোর্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মৌলানা খালিদ রাশিদ ফারাঙ্গি মাহালির বক্তব্য, ভারতে কোনও অভিন্ন বিধি থাকতে পারে না৷ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব বিধান আছে যা সেই গোষ্ঠী মেনে চলে৷
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে রাজনীতি আরও চড়বে৷ মুসলিম ও খ্রিস্টানরা জোরালো আপত্তি জানাবে৷ জনজাতিদের মধ্যেও অভিন্ন বিধি নিয়ে আপত্তি আছে৷ অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মূল লক্ষ্য হল বিয়ের বয়স, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে এক নিয়ম চালু করা৷ আপত্তি, বিরোধিতার কারণ, এই সব ক্ষেত্রে এক এক ধর্মে এক এক নিয়ম চালু আছে৷ ইসলামিক রীতি অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের নূ্যনতম বয়স ১৪ ধরা হয়৷ বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই তালাক প্রথা অনুসরণ করে থাকে৷ আদিবাসীদের একাধিক গোষ্ঠীকেও বিয়ের নূ্যনতম বয়স ১৮-র কম৷ সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে উত্তরাখণ্ডের বিলে জনজাতি এবং পাহাডে়র মূল নিবাসীদের অভিন্ন বিধির আওতায় আনা হয়নি৷ অর্থাৎ তারা নিজেদের সম্প্রদায়ের প্রচলিত নিয়মেই বিয়ের বয়স, বিচ্ছেদ, দত্তক গ্রহণ এবং উত্তরাধিকার নির্ধারণ করতে পারবে৷
উত্তরাখণ্ডে বিজেপি ২০২২-এর বিধানসভা ভোটে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ যদিও গোটা দেশেই বিজেপি অভিন্ন বিধি চালু করা হবে বলে দলের জন্মলগ্নেই ঘোষণা করেছে বিজেপি৷ অনেকেই মনে করছে, গোটা দেশে চালু করার আগে কয়েকটি রাজ্যে তা বলবৎ করে দল প্রতিক্রিয়া যাচাই করে নিতে চাইছে৷ উত্তরাখণ্ডকে এই ব্যাপারে দলের পরীক্ষাগার করা হল৷ ২০২৪-এ মোদী সরকার বিপুল সংখ্যাধিক্য নিয়ে ক্ষমতায় টিকে গেলে তা গোটা দেশে বলবৎ করা হতে পারে৷