নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন (সিএএ) নিয়ে শুনানিতে অংশগ্রহণ করার জন্য মানবাধিকার বিষয়ক রাষ্ট্রসংঘ কমিশনারের অফিস সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। তারা বলেছে, এই বিচারপর্বে ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, রীতিনীতি ও মানদণ্ডকে বিবেচনা করার প্রয়ােজন রয়েছে।
মানবাধিকার সংক্রান্ত রাস্ত্রসঙ্ঘ হাইকমিশনার মিশেল ব্যাসেলেট জেরিয়ার তরফে এই আবেদনটি পেশ করা হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষা ও প্রসার ও এব্যাপারে প্রয়ােজনীয় বক্তব্য রাখার স্বার্থেই তারা এই মামলায় তৃতীয় পক্ষ হতে চেয়েছে। হাইকমিশনারের অফিস থেকে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত মানুষকে রক্ষা করার জন্য সিএএ-র উদ্দেশ্যকে স্বাগত জানানাে হয়েছে। কিন্তু এই আইনে নির্যাতিত মুসলিমদের বিভিন্ন অংশকে বাদ রাখার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তােলা হয়েছে।
তাদের আবেদনে বলা হয়েছে, একটা অনিয়মিত পরিস্থিতিতে উদ্বাস্তু সহ হাজার হাজার অভিবাসী সিএএ’র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়ে উপকৃত হবে, যারা অন্যথায় নিজেদের দেশে সুরক্ষা পেতে বাধার সম্মুখীন হতেন এটা একটা প্রশংসাজনক উদ্দেশ্য কিন্তু ওইসব দেশে আহমেদিয়া, শিয়া মুসলিম সহ মুসলিম ধর্মমতে বিশ্বাসীদের মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতিও একই ভিত্তিতে সুরক্ষা দাবি করে, যেমন অনুকুল ব্যবস্থা সিএএতে রাখা হয়েছে।
সিএএ’র সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পেশ হওয়া বেশ কিছু পিটিশনের ব্যাপারে শীর্ষ আদালত গত ১৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রের জবাব তলব করেছে। হাইকমিশনারের অফিসের আবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও অভিবাসীদের জন্য তার প্রয়ােগের ব্যাপারে সিএএ কিছু গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
আইনের চোখে সমতার অধিকার এবং ভারতের মানবাধিকার দায়বদ্ধতার অধীনে জাতীয়তার ভিত্তিতে বৈষম্য না করার ব্যাপারে সাযুজ্য সহ অন্যান্য বিষয়েও সিএএ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তির কথা উল্লেখ করে এই সংস্থার আবেদনে বলা হয়েছে, আইন অনুসারে সমান সুরক্ষার অধিকার আবেদনে বলা হয়েছে আইন অনুসারে আইন অনুসারে সমান সুরক্ষার অধিকার ও আইনের চোখে সমান অধিকারকে ভারত এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে ভারতের দায়বদ্ধতার আলােকে ভারতের সংবিধানের সঙ্গে সিএএ’র সাযুজ্য পরীক্ষা করার জন্য আদালতকে সাহায্য করতে চাইছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই সংস্থা। এই সংস্থা সিএএ সংক্রান্ত বিচারপর্বে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, রীতিনীতি ও মানদণ্ডকে বিবেচনায় আনার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
২০১১-এর জনগণনার কথা উল্লেখ করে সংস্থার আবেদনে বলা হয়েছে। ভারতে বাইরে থেকে আগত ৫৮ লক্ষ ৭০ হাজার অভিবাসী মানুষের বাস, যার মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি এ সছে আফগানিস্থান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে। এই অভিবাসীদের মধ্যে ৬৬০০ এসেছে আফগানিস্থান থেকে ২৩ লক্ষ এসেছে বাংলাদেশ থেকে ও ৭০৭,০০০ জন এসেছে পাকিস্তান থেকে।
২০১১-এর জনগণনায় দেখা গিয়েছে, ভারতের বাইরে থেকে যে ৫৮ লক্ষ ৭০ হাজার অভিবাসী এসেছে তার মধ্যে ৪,৭৫,৯১০ জন এসেছে ২০১১-এর আগে ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে। এই তথ্য থেকে পরিষ্কার নয় এই অভিবাসীরা কি অনিয়মিত অভিবাসী, অথবা একটা ধর্মের কত অংশ সিএএ’র সুবিধা পাচ্ছে না। ভারতে অভিবাসীদের বিশেষ করে অনিয়মিত অভিবাসীদের কোনও বিশ্বস্ত পরিসংখ্যান নেই। আবেদনে বলা হয়েছে জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা বা অভিবাসী মর্যাদা নির্বিশেষে সমস্ত অভিবাসীরই মানবাধিকার ও সুরক্ষার অধিকার আছে।