বেজিং, ১৭ এপ্রিল – চারিদিকে দুধসাদা বরফের পুরু আস্তরণ। কোথাও কোন জনপ্রাণী নেই। কারণ তখন সেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের চার ডিগ্রি নীচে। যে তাপমাত্রা কোন মানব বা প্রাণীকুলের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়. বরফে ঢাকা পাহাড়ে ঘেরা বরফের আস্তরণের উপর খালি গায়ে বসে যোগাসন করছেন এক সুঠামদেহী পুরুষ। গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম শেষ। তারপরই মাথা নীচে পা উপরে তুলে শীর্ষাসন করলেন সেই খালি গায়েই। এই ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
যাঁকে এই ভিডিওয় যোগব্যায়াম করতে দেখা গেছে তিনি হলেন চিনে রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রধান বঙ্গ সন্তান সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি নিজেই সাড়ে চার মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি করেছেন। ছবিতে সিদ্ধার্থ দেখিয়েছেন কীভাবে বরফে মোড়া পাহাড়ে, হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায়, খালি গায়ে কঠিন থেকে কঠিনতম যোগব্যায়াম করছেন তিনি। কখনও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, আবার কখনও শীর্ষাসন বা স্ট্রেচিং। এই ডকুমেন্টারিতে সিদ্ধার্থ বলেছেন, এইভাবে ব্যায়াম করলে করোনার মতো যে কোনও ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব। এতে শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় এই ডকুমেন্টারির নাম দিয়েছেন, ‘ব্রিদিং ফর গুড হেলথ’। চিনা কূটনীতিক সিদ্ধার্থের কথায়, “শ্বাসপ্রশ্বাসেই প্রাণ চলছে। জীবন শুরু হয় শ্বাস দিয়ে, মৃত্যুর সময় শ্বাসই বন্ধ হয়। তাই শ্বাসের ব্যায়ামই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।” যে কোনও রকম সংক্রমণজনিত ব্যধি থেকে বাঁচতে কী ধরনের ব্যায়াম করা জরুরি তা ধাপে ধাপে শিখিয়েছেন সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন এমন যোগব্যায়াম শুধু শরীর ঠিক রাখবে তা নয়, মনকেও শান্ত ও সংযত রাখবে। শারীরিক ও মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটাবে।
সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার বহু আগে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চলে আসে। ২০২০ সালে চিনে রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁর জীবনধারায় বদল আসে। একটা সময় নানা রোগ বাসা বাধে তাঁর শরীরে। ওবেসিটি, হাই কোলেস্টেরল, হাইপারটেনশনে, প্রি-ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন তিনি। তখন থেকেই যোগব্যায়াম শুরু । শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম-সহ নানা কঠিন যোগাসন করে তিনি ২৫ কেজি ওজন কমান। সেইসঙ্গে আনুষঙ্গিক সব রোগ ব্যাধিও কমতে শুরু করে। ফিরে পান মনের জোর। চিনে রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রধান সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আরও একটি পরিচয় হল, তিনি একসময় ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও উচ্চপদস্থ আধিকারিকের পদে ছিলেন।