লন্ডন, ৫ জুলাই – ব্রিটেনে অকাল বসন্ত বয়ে নিয়ে এল বাংলাদেশের টিউলিপ। বসন্ত ঋতুতে সবচেয়ে সুন্দর ফুলগুলির মধ্যে সবার আগে নাকি ফোটে টিউলিপ, তাই সে নতুন শুরুর প্রতীক। ফের নতুন উদ্যমে, নতুন লক্ষ্যে পথ চলার অঙ্গীকার। টিউলিপ রেজওয়ান সিদ্দিক, যাঁর পরিচয় শেখ হাসিনার বোনঝি হিসেবে, ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে চতুর্থবারও টিউলিপের্ জয়জয়কার। টানা চতুর্থবারও জয় তাঁর। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় তাঁর ভোটের হারও উর্দ্ধমুখী। এবছর তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন ৮ হাজার ৪৬২ ভোট। অন্যদিকে টিউলিপের ঝুলিতে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট। মেয়ের জয়ে আপ্লুত টিউলিপের মা তথা বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
টিউলিপ রেজওয়ান সিদ্দিকের রাজনৈতিক কেরিয়ার আজকের নয়। লেবার পার্টির নতুন প্রজন্মের অন্যতম উদীয়মান রাজনীতিক টিউলিপ রেজওয়ান সিদ্দিক যখন ২০১৫ সালের নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন, তা ছিল যথেষ্ট কঠিন । বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক এবারের নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন ৮ হাজার ৪৬২ ভোট। কনজারভেটিভ পার্টির একসময়ের নিরাপদ এই আসন লেবার পার্টিকে উপহার দিয়ে তিনি এখন আসনটিকে লেবার পার্টির নিরাপদ আসন করে তুলেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ছায়া শিক্ষামন্ত্রী, সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের ভাইস চেয়ারপার্সন , নারী ও সমতা নির্বাচন কমিটির সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন।
সফিক আহমেদ সিদ্দিক ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুল,হ্যাম্পস্টেডের রয়্যাল স্কুল ও মিল হিল স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। পরে ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি ও কিংস কলেজ, লন্ডন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ২০১১ সালে সরকার, রাজনীতি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
শেখ হাসিনার ছোট বোন টিউলিপের মা শেখ রেহানা কোনওদিন চাননি মেয়ে রাজনীতির জগতে আসুক। কিন্তু মেয়ের আগ্রহ দেখে বাধা হতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘আমি আসলে চাইনি যে সে রাজনীতিতে আসুক। আমি চাইছিলাম সে শিক্ষিকা কিংবা জজ-ব্যারিস্টার হোক অথবা অন্য কিছু। কিন্তু সব কিছু ছেড়ে সে রাজনীতিতে যোগ দেয় । কিন্তু তাঁর নিজের ইচ্ছায় সব কিছু ছেড়ে সে রাজনীতিতে যোগ দেয়। এখানে আমার কোন অবদান নেই। মা হিসেবে সন্তানকে যেভাবে দেখে, আমি সেভাবেই দেখি।”
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোট চার ব্রিটিশ নারী। অবশ্য এই চারজনই যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন। এঁরা হলেন টিউলিপ সিদ্দিক রুশনারা আলি , রুপা হক, ও আফসানা বেগম। গত নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলি যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে টানা পঞ্চম মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ৪৯ বছর বয়সী রোশনারা আলি বটাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো ১৫,৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। মূলত প্যালেস্টাইন ইস্যু নিয়ে বাঙালি অধ্যুষিত এই আসনে এবার চাপে পড়েন রোশনারা আলি। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভিন্ন প্রচার চালানোর অভিযোগও তোলা হয়। তবুও শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি রোশনারার চোখেমুখে । নির্বাচনে আরেক বাংলাদেশি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী রাবিনা খান ৪,৭৭৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।