লােকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাদাগিরির জেরে ধ্বনি ভােটে তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল পাশ করিয়ে নিয়েছিল মােদি সরকার। রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু এনডিএ জোটের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিরােধী দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
আজ সেই বাধার প্রাচীর টপকে সংসদের উচ্চকক্ষে অনায়াসেই পাশ হয়ে গেল ‘তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল’। এদিনও মােদি সরকারের পাশে দাঁড়াল জোট সরকারের সঙ্গীরা। জেডি (ইউ) এবং এআইএডিএমকে ভােট না দিয়ে সভাকক্ষ ত্যাগ করায় এনডিএ জোটের জয় নিশ্চিত হয়ে গেল । সেই সঙ্গে জোটে না থেকেও বিজেডি বিলের পক্ষেই ভােট দেয়।
বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানাের বিরােধীদের দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দিল শাসক জোট।
লােকসভায় ‘তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল’ ধ্বনি ভােটে পাশ হয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার রাজ্যসভায় এই বিল উত্থাপিত করে কেন্দ্র সরকার। লােকসভায় পাশের পর রাজ্যসভায় যাওয়ার আগে বিলটির কয়েকটি জায়গায় সংশােধন করার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানাের প্রস্তাব দেয় বিরােধীরা।
সেই প্রস্তাবের ওপর ভােটাভুটি শুরু হয় আজ। বিলের পক্ষে ভােট পড়ে ৯৯টি এবং বিপক্ষে পড়ে ৮৪টি ভােট। অর্থাৎ বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানাের জন্য পক্ষে ভােট পড়ে ৮৪টি। কমিটিতে পাঠানাের বিরুদ্ধে ভােট বেশি পড়ায় বিলটি অনায়াসেই সংসদের উচ্চকক্ষে পাশ হয়ে যায় আজ।
২৪১টি আসনের রাজ্যসভায় কোনও বিল পাশ করাতে গেলে ১২১ জন সাংসদের সমর্থন প্রয়ােজন হয়। এনডিএ জোটের সদস্য সংখ্যা ১১৬। সংখ্যার হিসাবে এনডিএ জোট সংখ্যালঘু রাজ্যসভায়। কিন্তু শাসক দলের দুই জোট সঙ্গীর কৌশলের জেরে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয় শাসক দল।
নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড ( জেডি (ইউ) ) এবং অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝগম (এআইএডিএমকে)-র সাংসদরা ওয়াকআইট করলে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১১৩। ম্যাজিক ফিগার এসে দাঁড়ায় ১০৭-এ। এনডিএ জোটের কাছে ১০৭ জন সাংসদ রয়েছে। এই সময় বিজু জনতা দল এনডিএ জোটের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও বিলটির পক্ষে ভােট দেয়।
জেডি (ইউ) প্রথম থেকেই তিন তালাক বিলের বিরােধীতা করে আসছিল। এরপর ওয়াকআউট করে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি। রাজ্যসভায় উপস্থিত ছিল না শরদ পাওয়ারের এনসিপি ও প্রফুল্ল পটেল।
রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হয়ে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিলটি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে পাঠান হবে। রাষ্ট্রপতি বিলে সই করলে তবেই আইনে পরিণত হবে। তাহলে আইনে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ বলে গন্য করা হবে। স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে স্বামীকে তিন বছরের কারাবাস করতে হবে।
আজ রাজ্যসভায় ‘মুসলিম মহিলা (বিবাহ অধিকার সংরক্ষণ) বিল, ২০১৯’ পেশ করেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। বিল পেশের পর কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী জানান, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, মানবিকতা, লিঙ্গ সমতার প্রশ্নে এই বিলকে নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। পাকিস্তান, মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের ২০টি দেশ তিন তালাক নিষিদ্ধ করতে পারে তাহলে আমরা পারবাে না কেন?’
তবে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ বলায় বিরােধীদের সমালােচনার মুখে পড়তে হয় মােদি সরকারকে। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, জেডি (এস) সহ বিরােধীরা বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানাের প্রস্তাব দেয়। বিরােধীদের বক্তব্য, হিন্দু আইনে বিবাহ-বিচ্ছেদ ফৌজদারি অপরাধ নয়, খ্রিষ্ট ধর্মেও ফৌজদারি অপরাধ বলা হয় না, তাহলে মুসলিমদের ক্ষেত্রে কেন হবে?
মঙ্গলবার তাৎক্ষনিক তিন তালাক বিল পেশ করার জন্য শাসক দলের সব সাংসদদের সভায় উপস্থিত থাকতে হুইপ জারি করে বিজেপি। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও ডিএমকের মতাে অনেক বিরােধী দলই সংসদে বিল পাশ করানাের ব্যাপারে সরকারের এত তাড়া কেন সে নিয়ে প্রশ্ন তােলে।
গত মে মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি সরকারের উত্থাপিত প্রথম খসড়া বিল ছিল এইটি। বিলে বলা হয়েছিল কোনও মুসলিম পুরুষ বিবাহ বিচ্ছেদ উদ্দেশ্যে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তির কারাদণ্ড হবে।
বিলটি প্রথম দফায় লােকসভায় পেশ হওয়ার পর কেন্দ্র সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির প্রথম উদ্দেশ্যই ছিল দেশে তাৎক্ষণিক তিন তালাক আইন প্রণয়ন করার। সেই উদ্দেশ্য আজ সফল হল মােদির।