বুধবার কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী কিরেন রিজিজু লোকসভায় পেশ করলেন বহু চর্চিত ও বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল। বিল পেশের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘এই বিল যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল এবং নতুন বিল ক্যাবিনেটে অনুমোদন পেয়েছে। আমরা কংগ্রেস কমিটির মতো নই, যে কমিটি একটি রাবার স্ট্যাম্পের মতো। আমাদের কমিটি যথাযথভাবে বিচার করে এবং বিল নিয়ে বিতর্কের সুযোগ রয়েছে।’
এদিন বিল পেশ করে রিজিজু দাবি করেছেন, ‘সরকার কোনও ধর্মীয় সংগঠন বা তাদের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছে না। কোনও মসজিদের সম্পত্তিতেও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। ওয়াকফ বোর্ডের সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগ নেই, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয় এটি।’ এরপরেই তিনি দাবি করেন যে ‘মুসলমানদের ভালোর জন্য ওয়াকফ বিল’ আনছে মোদী সরকার। তিনি আরও বলেছেন, ‘২০১৪ সালে যদি বিজেপি সরকার ক্ষমতায় না থাকলে কংগ্রেস সরকার সংসদ ও বিমানবন্দরের জমিও ওয়াকফকে দিয়ে দিত।’
কিরেন রিজিজুর মন্তব্যের পরেই স্লোগান দিতে শুরু করেন বিরোধীরা। তাঁরা দাবি করতে থাকেন যে, এই ওয়াকফ সংশোধনী বিল বেআইনি, অনৈতিক। তাঁদের পাল্টা জবাব দিয়ে কিরণ রিজিজু বলেন, ‘এই আইন আজকের নয়। স্বাধীনতার আগে ১৯১৩ সালে মুসলমান ওয়াকফ ভ্যালিডেটিং অ্যাক্ট পাশ করা হয়েছিল। ১৯২৩ সালে মুসলমান ওয়াকফ আইন আনা হয়। পরে ১৯৫৪ সালে ওয়াকফ আইন কার্যকর হয়েছিল। রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয় এই আইনে। তখন কেন কেউ বিরোধিতা করেননি?’
এরপরেই সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অখিলেশ যাদব ওয়াকফ বিল নিয়ে বলতে গিয়ে নোটবন্দির প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁর দাবি, একের পর এক ব্যর্থতা দিয়ে এই বিল তৈরি হয়েছে। যখনই বিজেপি কোনও বিল আনে নিজেদের ব্যর্থতা চাপা দেওয়ার জন্য আনে। এরপরেই কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগে অখিলেশ বলেন, ‘বিজেপি সরকারের নতুন রণনীতি ওয়াকফ বিল। ভাগাভাগির জন্য এই বিল এনেছে বিজেপি। এই বিল মুসলমান সম্প্রদায়কে পৃথক করে ফেলার চেষ্টা। আমরা বিলের বিপক্ষে ভোট দেব।’
অখিলেশকে সমর্থন করে সংসদে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদলের তরফে ওয়াকফ বিল নিয়ে আলোচনার সময় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ওয়াকফ সংশোধনী বিলের আড়ালে বিজেপি দেশবাসীকে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে ভাগ করতে চায়। সে কারণেই সম্প্রদায়ের উপর ভিত্তি করে ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে শ্রেণিবিভাগ। এটা আসলে বিজেপির অসৎ উদ্দেশ্যের দিকেই ইঙ্গিত করে।’ কল্যাণের দাবি, ‘ওয়াকফ বিল আসলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের চেষ্টা। ওয়াকফ মুসলিম সম্প্রদায়ের মেরুদণ্ড। অথচ প্রস্তাবিত এই বিলে যেসব পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে সবটাই অযৌক্তিক। ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার। সংশোধনী বিলে রাজ্যের ক্ষমতাও খর্ব করা হয়েছে। এই বিল অসাংবিধানিক।’
এরপরেই বিরোধীদের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে ওঠেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ করে শাহ বলেন, ‘ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য মানুষের মনে ভয় ছড়ানোর চেষ্টা করছেন বিরোধীরা। কেউ সরকারি বা অন্য কারও সম্পত্তি দান করতে পারে না। এমনটাই বলা আছে ওয়াকফ আইনে। যদি কেউ সেই সম্পত্তির মালিক হন, তবেই তা তিনি দান করতে পারেন। বিরোধীরা ওয়াকফ বিল নিয়ে শুধু মিথ্যা গুজব ও ভুল প্রচার করছেন। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে কোনও অ-মুসলিমকে নিয়োগ করা যাবে না।’
এই বিতর্ক যদি ভোটাভুটির দিকে গড়ায় তাহলে কার পক্ষে কত ভোট পড়তে পারে! কোন দলের কী অবস্থা রয়েছে লোকসভায়? যদি বিরোধীরা ভোটাভুটির উপর চাপ দেয় তাহলে তা ধ্বনি ভোটে হবে, নাকি বোতাম টিপে অথবা গোপন ব্যালটে, তা ঠিক করার অধিকারী একমাত্র স্পিকার ওম বিড়লা। এই বিল পাশ করতে বিজেপির প্রয়োজন ২৭২টি সমর্থন। সেখানে এনডিএ-এর মোট সাংসদ সংখ্যা ২৮২। অর্থাৎ এনডিএ জোটের পক্ষে থাকছে ২৮২টি ভোট। অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের সাংসদ সংখ্যা ২৩৫। ফলে ভোটাভুটি হলে বিরোধী জোটের পরাজয় সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে অনিবার্য। তবে মিমের প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসি এই বিলের কট্টর বিরোধী হলেও তিনি ইন্ডিয়া জোটের শরিক নন। এছাড়াও ওয়াইএসআরসিপির ৪ জন এমপিও জোট নিরপেক্ষ হলেও তাঁরা বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।