আম্ফানে বাংলাকে আরও ২৭০০ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র ‘খুবই নগণ্য’ মন্তব্য তৃণমূলের

আম্ফানে তছনছ শহর। (Photo by Kazi Shanto / AFP)

রাজ্যকে আম্ফানের জন্য আরও ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সাহায্যের ঘােষণা করল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি শুক্রবার এ রাজ্যের সঙ্গে আরও পাঁচটি রাজ্যকে ঘুর্ণিঝড়, বন্যা ও ধসের মােকাবিলার জন্য প্রায় ৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুমােদন দিয়েছে।

দ্বিতীয় দফার এই অর্থসাহায্যের জন্য কেন্দ্রকে ধন্যবাদ দিয়েও রাজ্যের শাসক দলের বক্তব্য, আস্ফানের ক্ষয়ক্ষতি, ভয়াবহতার কাছে এই টাকা খুবই নগন্য। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, ‘রাজ্য সরকার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে কেন্দ্রের কাছে ১ লক্ষ ২ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু দু’দফায় মিলিয়ে মােট ৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা দিল। এটা প্রয়ােজনের তুলনায় অত্যন্ত কম।

পরিসংখ্যান দিয়ে এদিন তিনি বলেন, আম্মানে ২৮ লক্ষ ৬ হাজার বাড়ি ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। নষ্ট হয়েছিল ১৭ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল। এ ছাড়া বহু রাস্তা, সেতু, পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প, বিদ্যুত সরবরাত ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। সেই সব হিসেব করেই রাজ্য সরকার ওই টাকা দাবি করেছিল। রাজ্য সরকার প্রাথমিক ভাবেই ৬৩৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে ত্রাণ ও পুনর্গঠনে। তার পরেও আরও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সেগুলি সবই রাজ্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। অথচ কেন্দ্র তার অর্ধেকও দিল না। তবে যা দিয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সুখেন্দুর বক্তব্য, ‘তবু বলছি কেন্দ্রকে ধন্যবাদ। তবে আমাদের দাবি থাকবে, কেন্দ্র যেন রাজ্যকে বঞ্চিত না করে। আমাদের দাবির অন্তত ৭৫ শতাংশ টাকা দেয়।


রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষ আমলাৱা বহুবার কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন। রাজ্যে বিধানসভা ভােটের বাকি আর ৫-৬ মাস। সেই কথা মাথায় রেখে অমিত শাহ এই আনুদান মঞ্জুর করেছেন বলে ওয়াকিবহাল শিবিরের একাংশের মত। যদিও অন্য অংশের যুক্তি, বাকি আরও পাঁচটি রাজ্যে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। সেগুলির কোথাও ভােট নেই। তাই এটা রাজনৈতিক ভাবে দেখা উচিত নয় বলেও মত অন্য অংশের।

আম্ফানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ওড়িশাতেও। ওই সময় ওড়িশাকেও ৫০০ কোটি টাকা সাহায্যের ঘােষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ওড়িশাকে ঘূর্ণিঝড়ের মােকাবিলায় আরও ১২৩,২৩ কোটি টাকা এদিন মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র।

এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের মোকাবিলায় মহারাষ্ট্রকে দেওয়া হচ্ছে ২৬৮,৫৯ কোটি টাকা। বর্ষা ও বন্যার ক্ষতি মােকাবিলায় কর্নাটকের জন্য বরাদ্দ ৫৭৭.৮৪ কোটি এবং মধ্যপ্রদেশের জন্য ৬১১.৬১ কোটি। ৮৭,৮৪ কোটি টাকা সিকিম পাবে ধসের মােকাবিলায়।

প্রসঙ্গত, এ বছরের ২০ মে সুন্দরবনের সাগর দ্বীপের কাছে উপকূলে আছড়ে পড়েছিল আতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। প্রায় ১৮৫ কিলােমিটার গতিবেগের ওই ঝড়ে কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। তারপর ২৩ মে রাজ্যে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে রাজ্যকে ১ হাজার কোটির আর্থিক সাহায্যের ঘােষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই টাকা সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যকে দিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। তার সঙ্গে শুক্রবার জাতীয় বিপর্যয় মােকাবিলা তহবিল থেকে বরাদ্দ হল আরও ২ হাজার ৭০৭.৭৭ কোটি টাকার অনুদান।