• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

ছুটি

রথীন কুমার চন্দ (চন্দননগর) জীবনের রোজনামচা থোড়-বড়ি খাঁড়া আর খাঁড়া বড়ি থোড়, গণ্ডি বাধা একঘেয়ে জীবনের জোয়াল টানা থেকে হাফ জিরোতে বা ফুরসত পেতে; মনের ক্লান্তি বাগে আনতে; চোখ টেনে আসা ও মনের অবসাদ জুড়োতে, ছুটি তো একটা ছুতো৷ মানুষ নিজে বড় স্বার্থপর, নিজের মনোরঞ্জনের খোঁজে কোথায় মনের শান্তি খুঁজে পাব তার জন্য খড়ের গাদায়

রথীন কুমার চন্দ (চন্দননগর)
জীবনের রোজনামচা থোড়-বড়ি খাঁড়া আর খাঁড়া বড়ি থোড়, গণ্ডি বাধা একঘেয়ে জীবনের জোয়াল টানা থেকে হাফ জিরোতে বা ফুরসত পেতে; মনের ক্লান্তি বাগে আনতে; চোখ টেনে আসা ও মনের অবসাদ জুড়োতে, ছুটি তো একটা ছুতো৷ মানুষ নিজে বড় স্বার্থপর, নিজের মনোরঞ্জনের খোঁজে কোথায় মনের শান্তি খুঁজে পাব তার জন্য খড়ের গাদায় ছুঁচ খুজতে সে পিছপা হবে না৷ বাঙ্গালী ছুটি নামক ছুঁতর গুতোয় হুজুগে বদনাম নিতেও রাজী৷ বাঙালির ছুটি কাটানোর ফন্দি-ফিকির পরিকল্পনা মাফিক৷ ছুটির ফাঁদে পরতে বাঙালি ভালবাসে, তাই তার রসদ কোন জায়গায় লাভজনক সেই হিসাবনিকেশ চলে চুলচেরা৷
গন্তব্যে পেঁৗছানোর বন্দবস্ত থেকে প্রত্যবর্তনে৷ বাঙালির মনের কাছের, প্রিয় এবং প্রতিবেশী রাজ্যের ছুটি কাটানোর দ্বিতীয় পীঠস্থান ও বাসস্থান হয়ে উঠেছে পূরী, শ্রীক্ষেত্র বা নীলাচলধাম৷ বাঙালির ‘রথ দেখা ও কলা বেচা’ তীর্থ ও ছুটির ভ্রমণ পূরণ হয়৷ পূরীর জগ্ননাথদেবের রথযাত্রা ও ভোগ ভক্ষন উপভোগের মহান কর্মফল লাভ করতে অগুনিত বার এই পুরীধামে তীর্থের কাক হয়ে আসেন বাঙালি৷ প্রাণে ও মনে মহাপ্রভুর পাদপরশে ধন্য হওয়া পুরীক্ষেত্রে নিজের পূণ্য হাতছাড়া করতে চান না ঘরকুনো বাঙালি৷ বাঙ্গালীর অন্য একটি তীর্থ বার্ধ্যকের বারণসী৷ সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্রায়িত ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ এ দশাস্মেধ ঘাট নস্টালজিক ভাবনার অঙ্গ৷
কাশী বিশ্বনাথের বেনারস বা বারণসী মনের কোণায় পূণ্য অর্জনের মহাব্রত থেকে বঞ্চিত হতে চান না বাঙালি৷ কেদারনাথ ও বদ্রীনাথের  শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জকে জয় করে তীর্থ ভ্রমণ করাই বাঙালির তপব্রত৷ দেশের অনান্য প্রান্তে বাঙালি ছুটির সালতাতমি নিতে ধর্মীয় তীর্থের সুড়সুড়ি কাজে লাগায়৷ ধর্মের মাহাত্মে জাগ্রত হিসাবে মান্যতা পাওয়া, বাঙালির কাছে তীর্থচক্র পঞ্চলিঙ্গেশ্বর, রামেশ্বরম, তিরুপতি প্রভৃতি৷ বাঙালির ছুটি কাটানোর মৌতাত লেগে থাকে একই অঙ্গে বহুরূপের সমাহার৷ ধর্মভীরু বাঙ্গালি পরিণত হয় ধর্মপ্রাণ তীর্থগামী পরিব্রাজক৷ ছুটি কাটাতে গিয়ে তীর্থের টানে সেই স্থানকে ভালবেসে ফেলার নজির অন্য কোন ভারতীয়র ক্ষেত্রে নেই৷ বিত্তবান বাঙালি নির্জন ও মনের কোণে জায়গা করে নেওয়া তীর্থ স্থান পুরী ও বেনারসে স্থায়ী বাসস্থান কিনে ফেলেন৷ ভবিষতে দ্বিতীয় বাসস্থান হিসাবে বিবেচনার মধ্যে রাখার চিন্তাভাবনা থেকে অথবা বেড়াতে এসে আবার বাসস্থান নিয়ে বিপাকে পরার অস্বস্তি থেকে বাচতে আগাম পরিকল্পনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়৷
হোটেল সন্ধানী হিসাবে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান চালানোর ঝক্কি থেকে বাঁচতেও এই পন্থার আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে এই ধারনার বশবর্তী হয়েছে বাঙালি সহজ রাস্তা বাছতে৷ বাঙালি ছুটি কাটানোর অছিলায় সংসার বিবাগী হয়ে বাণপ্রস্থ যাত্রায় মথুরা, ব্রন্দাবন বা কাশীবাসী হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন৷ বাঙালির অবসর জীবনের ছূটি কাটানোর স্থায়ী বন্দোবস্ত সংসার বিবাগী হওয়ার বহু প্রাচীন ও বুদ্ধিদীপ্ত উপায় বটে৷ অ্যাডভ্যঞ্চার প্রিয় বাঙালি এখন ট্রেকিং অছিলায় ছুটি কাটানোর পাকাপাকি ফন্দিতে বাঙালির আভিজাত্য ও কুলীনতা বজায় রাখতে সচেষ্ট৷ এমনকি জাঙ্গল সাফারি বা প্রকৃতি প্রেমিক বাঙালি আজকাল জঙ্গলে বিভিন্ন পাখী ও পশুদের সাথে ছুটি কাটানোর অছিলা, বাঙালিকে ঘরমুখো আর মাছে ভাতে বাঙালি থেকে, মানুষ হওয়া আধুনিক বাঙালির মুখ হিসাবে তুলে ধরতে পেরেছে ও আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে৷ বাঙালির ছুটি কাটানোর মোড়ক পরশপাথরের মায়ার চমক৷