ত্রিপুরার চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার। আগরতলা, টাউন বড়দোয়ালি, সুরমা ও যুবরাজনগরে এদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে।
সে কারণে বুধবার ভোটকর্মীদের ব্যক্ততা ছিল তুঙ্গে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল শুরু হয়েছে।
এই চারটি কেন্দ্রের উপনির্বাচনকে ঘিরে সরগরম ত্রিপুরার রাজ্য রাজনীতি। বুথে বুথে পৌঁছে গিয়েছেন ভোটকর্মীরা। যাবতীয় প্রস্তুতি তুঙ্গে অপেক্ষা শুধু ভোটগ্রহণ করার।
ত্রিপুরার উপনির্বাচনের প্রচার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা টাউন বড়দোয়ালি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে কংগ্রেসের সুদীপ রায় বর্মন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আগরতলা কেন্দ্র থেকে। নির্বাচনী ময়দানে বাম, বিজেপি, কংগ্রেস থাকলেও প্রচারের সব আলো তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরেই।
কারণ ত্রিপুরা উপনির্বাচনে প্রচারের ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর জনসভা এবং র্যালিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ত্রিপুরায় ভালো ফল করতে অঙ্গীকারবদ্ধ তৃণমূল।
সে কারণে ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।
তিনি রীতিমতো ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন এখানে। তৃণমূল কংগ্রেসকে বিকশিত করার জন্য।
এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও নির্বাচনী প্রচারে ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। মন্ত্রী মানস ভুইয়া কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন।
কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নেই ত্রিপুরায় এই নিয়ে এই রাজ্যের মাটিতে জোরদার সওয়াল করেন তিনি। সেই সঙ্গে বিজেপির জনস্বার্থ বিরোধী নীতির পক্ষে সওয়াল করতে দেখা যায় তাঁকে।
মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কেন্দ্রীয় সরকারের করা বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। কুণাল ঘোষ লাগাতার ত্রিপুরার মাটিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে শক্তিশালী করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে মমতার দ্রুত হিসেবে অভিষেক ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই রাজ্যের মানুষজনকে আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, অভিষেক যেদিন ত্রিপুরাতে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছিলেন, ঠিক সেদিন তাঁর বাড়িতে সিবিআই যায়।
তবুও অভিষেককে দমানো যায়নি এর পাশাপাশি, একঝাক তৃণমূলের নেতানেত্রীরা ত্রিপুরার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন।
যদিও এই উপনির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করে সরকারের কোনও পরিবর্তন হবে না ঠিকই, কিন্তু আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের মানুষের কাছে একটি বার্তা পৌঁছবে।
সে কারণে ত্রিপুরায় রাজনৈতিক পরিবর্তনের হাওয়া তুলতেই এই উপনির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল।
আগরতলা কেন্দ্রে তৃণমূলের পান্না দেব, টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্রে সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরমায় অর্জুন নমশূদ্র এবং যুবরাজনগরে মৃণালকান্তি দেবনাথকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এই চার প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অসমের সুস্মিতা দেবও ত্রিপুরার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরাতে দু-দু’টি সভা করেন। ত্রিপুরা বিধানসভার চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে।
এই উত্তাপ বজায় থাকবে ভোট গণনা না হওয়া পর্যন্ত। প্রতিটি দল চায় নিজেদের শক্তি যাচাই করে নিতে। সে কারণে নির্বাচনী লড়াই রীতিমতো জমজমাট।
তবে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ নিখাদ বিজেপি বিরোধিতাকে সম্বল করে ত্রিপুরার নির্বাচনী ময়দানে লড়ছে তৃণমূল।
বাম-কংগ্রেস নির্বাচনী আসরে থাকলেও তৃণমূলকে ঘিরে ত্রিপুরাতে নতুন করে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে।
ত্রিপুরার মানুষজন মুখিয়ে রয়েছেন মমতার দলের পাশে থাকতে। এক্ষেত্রেও বিজেপির সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে মানুষজন বুথমুখী হবেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন।
জাতীয় রাজনীতিতে এখন তৃণমূলের প্রভাব আগের থেকে অনেক বেশি। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে যশবন্ত সিনহার নাম প্রস্তাব করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ত্রিপুরায় তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে বসন্ত এলে তা স্বাভাবিকভাবে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেকখানি এগিয়ে দেবে। সে কারণে আজ ত্রিপুরার ভোটকে ঘিরে শাসক ও বিরোধী দু’পক্ষের কৌতূহল থাকবে যথেষ্ট।
চারটি বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকলেও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, বিজেপির গুণ্ডা ও বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একটা চাপা সন্ত্রাসের বাতাবরণ এই চার বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে।
মানুষ যদি বিজেপির এই গেরুয়া সন্ত্রাস উপেক্ষা করে গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলে আজ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে অনেক হিসেব নিকেশ বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
উপনির্বাচন সে কারণে বিজেপির কাছে অ্যাসিড টেস্ট। মুখ্যমন্ত্রী পদে পরিবর্তন ঘটিয়েছে বিজেপি। ফলে মানিক সাহার দিকেও এদিন নজর থাকবে। ফলাফল যাই হোক না কেন আত্মবিশ্বাসী ঘাসফুল শিবির।
কারণ সীমিত সময়ের মধ্যে ত্রিপুরাতে তৃণমূলকে ঘিরে এক অন্য ধরনের উন্মাদনা তৈরি হয়েছে।
ত্রিপুরার মানুষজন মুখিয়ে রয়েছেন তৃণমূলকে এই রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে। এখন প্রশ্ন, শাসকের সন্ত্রাস উপেক্ষা করে মানুষজন কতটা বুথমুখী হন, এখন সেটাই দেখার।