• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

আজ রামমন্দিরের ভূমিপুজোয় মোদি

উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে রামমন্দিরের ভূমিপুজোকে ঘিরে। বুধবারের এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে দেশজুড়ে আগ্রহ তুঙ্গে।

(Photo: AFP)

উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে রামমন্দিরের ভূমিপুজোকে ঘিরে। বুধবারের এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে দেশজুড়ে আগ্রহ তুঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তিন ঘন্টা কাটাবেন মোদি অযোধ্যায়।

এই অনুষ্ঠানের প্রতিটি পদক্ষেপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হবে এমনটাই জানা যাচ্ছে। রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের আগে হনুমান মন্দিরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাঁর বিশেষ পুজো রয়েছে। যদিও মূল অনুষ্ঠান রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। তামিলনাড়ুর সাধুরা রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টকে সোনা ও রুপোর দুটি ইট দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। রুপোর ইটটির ওজন ২০ কিলোগ্রাম। সোনার ইটের ওজন ৫ কিলোগ্রাম।

ঐতিহাসিক মুহূর্তের আগে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মত এইবড়সড় ইভেন্টকে সাফল্যমণ্ডিত করতে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে অযোধ্যাকে। মন্দিরনগরী অযোধ্যা গত কয়েকদিন ধরে নানা রঙে সেজেছে। নানা রঙের মেলবন্ধন ঘটেছে অযোধ্যার রাস্তার দেওয়ালে দেওয়ালে। গেরুয়া রঙের পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়েছে অযোধ্যা। বড় বড় তোরণ তৈরি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ব্যানারে ব্যানারে ছয়লাভ অযোধ্যা। অযোধ্যার পাশাপাশি বারাণসীতেও দীপ উৎসবের আয়োজন চলছে। বারাণসীর মতো গঙ্গা আরতির আয়োজন করা হয়েছে অযোধ্যায়। সোমবার কিছুটা ফাঁকফোকর থাকলেও মঙ্গলবার থেকে অযোধ্যাকে পরিণত করা হয়েছে দুর্ভেদ্য দুর্গে। নাকা চেকিং চলছে শহরজুড়ে। প্রধানমন্ত্রীর যাত্রাপথের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের ব্যস্ততা নজর কেড়েছে।

রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরের অনুষ্ঠানকে ঘিরে দেশজুড়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। এরই মধ্যে প্রস্তাবিত মন্দিরের নকশা প্রকাশ করল রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। মঙ্গলবার একাধিক ছবি প্রকাশ করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ছবি শেয়ার করা হয়েছে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে এই মন্দির স্থাপত্যকলার অনন্য উদাহরণ হবে বলে দাবি করা হচ্ছে।

রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হচ্ছে তিনতলা কাঠামো থাকবে এই মন্দিরের। মন্দিরের যে নকশা তৈরি করা হয়েছিল তার থেকে এই মন্দিরের আয়তন দ্বিগুণ হতে চলেছে। আগে বলা হয়েছিল মন্দিরে দুটি গম্বুজ থাকবে। ভক্তসমাগমের কথা মাথায় গম্বুজের সংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচটি করা হচ্ছে। অসংখ্য স্তম্ভ ও বেশ কিছু চুড়া থাকবে।

১৯৮৮ সালে মন্দিরের প্রাথমিক যে নকশা তৈরি হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল মন্দিরের উচ্চতা হবে ১৪০ ফুট। কিন্তু তার পরে কেটে গিয়েছে ৩০ বছওে বেশি সময়। সুপ্রিম কোর্ট গত বছর ওই বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতে মন্দির তৈরিতে অনুমোদন দেওয়ার পর নকশায় বেশ কিছু পব্বির্তন করা হয়। মূল মন্দিরটিকে ঘিরে থাকবে চারটি ছোট ছোট মন্দির।

মন্দিরের ভিত তৈরিতে লাগবে দু’লক্ষ ইট। মন্দিরের ছ’টি ভাগ থাকবে। অগ্রদ্বার, সিংহ্বার, নৃত্যমণ্ডপ, রমণ্ডপ, পরিক্রমা ও গর্ভগৃহ। মন্দির তৈরি করতে ১ লক্ষ ৭৫ হাজর ঘনফুট পাথর লাগবে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ঘনফুট পাথর কাটা হয়ে গিয়েছে। রামমন্দিরের ভূমিপুজো ঘিরে চড়তে থাকা পারদের মধ্যেই অযোধ্যা থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দূরে গৌতম বুদ্ধ নগরের রাবণের পুজোর জন্য নির্দিষ্ট এক মন্দিরের পূজারি উচ্ছ্বসিত। পূজারি মোহন্ত রামদাস জানিয়েছেন, ভূমিপুজো শেষ হলেই তিনি মিষ্টি বিতরণ করবেন।

সংবাদসংস্থা পিটিআইকে রামদাস বলেন, রামের মন্দিরের ভূমিপুজোর খবরে আমি খুব খুশি। সবাইকে লাড্ডু বিতরণ করব। রামায়ণের দুই চরিত্র রাম ও রাবণের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাবণ না থাকলে রাম সম্পর্কে কেউ জানতে পারত না। আর শ্রীরাম যদি অনুপস্থিত থাকতেন তাহলে রাবণও অজানা থেকে যেত।

এদিকে, রামমন্দির নির্মাণের জন্য ২১ হাজার টাকা অনুদান দিলেন তরুণ কংগ্রেস নেতা তথা গুজরাত প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরি সভাপতি হার্দিক প্যাটেল। ২৭ বছর বয়সি এই নেতা জানিয়েছে, তিনি এবং তার পরিবার মিলে এই অনুদান দিচ্ছেন। হার্দিৰ্ক এদিন বলেছেন, মন্দির নির্মাণ হলেই দেশে রামরাজ্য কায়েম হবে।

তবে তার মুখে রামরাজ্য শব্দ নিয়ে অযথা যাতে বিতর্ক তৈরি না হয় তারও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন হার্দিক। হার্দিকের কথায়, রামরাজ্য মানে কৃষকদের সমৃদ্ধি, বেকারদের কর্মসংস্থান, মহিলাদের নিরাপত্তা, শিশুদের স্নিামূল্যে উৎকৃষ্ট শিক্ষা, গ্রামীণ ভারতের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি। দেশের নাগরিক হিসেবে এটাই আমার চাওয়া।

একদিকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি অন্যদিকে হার্দিকের বার্তা, পর্যবেক্ষকদের মতে কংগ্রেস নেতৃত্ব হিন্দুত্বের ভাবাবেগে আঘাত লাগে এমন কোনও মন্তব্য করতে চাইছে না। অযোধ্যা নিয়ে সামগ্রিকভাবে হিন্দুদের ভাবাবেগ রয়েছে। বিজেপি বিরোধিতা করতে গিয়ে যাতে হিন্দুদের আবেগে আঘাত না লাগে সেব্যাপারে সতর্ক কংগ্রেস। সেকারণেই হার্দিককে দেখা গেল অনুদান দিতে কমলনাথ জানিয়েছে, তিনি আজ নুমান চালিশা পাঠ করবেন।

আসলে এভাবেই কংগ্রেস দুটো জিনিস তুলে ধরতে চাইছে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হিন্দুত্বের বিরোধিতা নয়, আর অন্যদিকে হিন্দুরে পেটন্ট একা বিজেপি’র নয়। রামমন্দির আন্দোলন সামগ্রিকভাবে হিন্দুদের। এটা কোনও বিশেষ দলের নয়।