হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টি, ২ রাজ্যে মোট ২৩ জনের মৃত্যু 

দেরাদুন ও সিমলা, ৩ অগাস্ট – হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে আছড়ে পড়েছে প্রকৃতির রোষ। কেরলের পর মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যস্ত দুই রাজ্য। বৃষ্টি ও ধসে হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে ক্রমান্‍বয়ে ৮ ও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুই রাজ্যের প্রশাসনই জীবিতদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। তবে আগামী কয়েক দিন হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে আতঙ্ক বেড়েছে।
 
মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ধস নামছে যত্রতত্র। হিমাচলপ্রদেশের একাধিক এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ড্রোনের সাহায্যে দুর্গতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ ৪৫ জন। অন্যদিকে, কেদারনাথে বৃষ্টি বিধ্বস্ত রাস্তায় আটকে পড়া প্রায় ৮০০ জন তীর্থযাত্রীকে সরিয়ে নিতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর চিনুক ও এমআই ১৭ হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। আবহাওয়ার উন্নতি হলে শনিবার তীর্থযাত্রীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিযা শুরু হবে।
 
হিমাচলপ্রদেশে তিনজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮। হিমাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি আগামী ৩ মাস সংসার চালানোর জন্য গ্যাস, খাবার , অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হবে।
 
হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ৩৬১২টি রুটের মধ্যে ৮২টি রুটে বাস পরিষেবা স্থগিত রেখেছে। হিমাচলপ্রদেশের রামপুর সামেজ গ্রাম থেকে নিখোঁজ কয়েকজন শিশু। আবহাওয়ার অফিসের তরফে শুক্রবার সিমলায় বৃষ্টির হলুদ সতর্কতা জারি রয়েছে। ৬ অগস্ট পর্যন্ত হিমাচলপ্রদেশের একাধিক জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
 
হিমাচল প্রদেশের সিমলা জেলার ছোট্ট গ্রাম সামেজ। গত ৩১ জুলাইয়ের মেঘভাঙা বৃষ্টির পর থেকেই সেখানে অন্তত ৩৩ জন নিখোঁজ। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে ৩৮টি ঘর। দু’টি ব্রিজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোটা গ্রামে কেবল একটি বাড়িই কোনও মতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর ‘ভাগ্যের জোরে’ বেঁচে গিয়েছেন গুটি কয়েক গ্রামবাসী। এমনই এক জন হলেন অনিতা দেবী। সংবাদমাধ্যমের কাছে দুর্যোগের সেই রাতের অভিজ্ঞতা শোনান তিনি।অনিতার কথায়, ‘‘বুধবার রাতে পরিবারের সঙ্গে ঘুমিয়েছিলাম, হঠাৎই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল ঘরবাড়ি। বাইরে তাকিয়ে দেখি, পুরো গ্রাম ভেসে গিয়েছে।’’ আতঙ্কে তাঁরা কয়েক জন স্থানীয় একটি মন্দিরে আশ্রয় নেন। সেখানেই কোনও মতে বাকি রাতটা কাটে । অনিতা বলেন, ‘‘শুধু আমাদের বাড়িটাই কোনওরকমে এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পায়। এখন আমি কার সঙ্গে থাকব তা-ও জানি না।’’ বলতে বলতে গলা কেঁপে ওঠে তাঁর।
 
সামেজ গ্রামেরই আর এক বাসিন্দা বক্সী রাম। বয়স ষাটের কোঠায়। বক্সী জানাচ্ছেন, তাঁর পরিবারের অন্তত ১৪ জন সদস্য ভেসে গিয়েছেন বন্যায়। বিপর্যয়ের দিন রামপুরে গিয়েছিলেন, তাই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। দুপুরে বন্যার খবর পেয়েই গ্রামে পৌঁছন পরদিন ভোরে। এসে দেখেন, নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে গোটা গ্রাম। বক্সীর ভাষায়, ‘‘সব কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু প্রিয়জনদের খুঁজে চলেছি। কে জানে, ওদের কেউ না কেউ হয়তো এখনও বেঁচে আছে!’’
 
গত বুধবার রাত থেকে মেঘভাঙা বৃষ্টি আর ধসে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশের শিমলা, মান্ডি এবং কুলু জেলা। ধসের কবলে ভেঙেছে বহু ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ওই তিন জেলায় ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ ৫৩ জন। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ কুলু এবং মান্ডিতে। ওই দুই জেলায় সমস্ত স্কুল এবং কলেজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। কুলুতে ভারী বৃষ্টির জেরে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে বিপাশা নদী। কোথাও কুলু-মানালি জাতীয় সড়কের উপর দিয়েই বইছে নদীর জল। এই পরিস্থিতিতে ৩ নম্বর জাতীয় সড়কে সাময়িক যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কুলু জেলার বাগীপুলে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ধসে চাপা পড়েছে ৯টি বাড়ি। তার মধ্যে একটি বাড়ির গোটা পরিবারই জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বলে খবর। মান্ডির থালতুখড় এলাকায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে অন্তত ৯ জন নিখোঁজ বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে।
 
উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ, তেহরি, চামোলি, দেরাদুন, হরিদ্বার জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কেদারনাথ রুট থেকে ৭২৩৮ তীর্থযাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। কেদারনাথ রুটে আটকে থাকা প্রায় ৮০০ তীর্থযাত্রীকে হেলিকপ্টারে উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাঁদের কেদারনাথ ছাড়াও ভীমবালি ও গৌরীকুণ্ডের ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০০-র উপর বাড়ি।