মহড়ার সময় ভেঙে পড়ল উপকূলরক্ষী বাহিনীর কপ্টার। রবিবার দুপুরের গুজরাতের পোরবন্দরে ঘটা এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। ঘটনায় আরও দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিদিনের মতই রবিবারও ট্রেনিং চলছিল। আর সেই সময়ই সেটি ভেঙে পড়ে কপ্টারটি। উপকূলরক্ষী বাহিনীর অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার (এএলএইচ) এটি, যার নাম ধ্রুব। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা।
ভেঙে পড়ার পর হেলিকপ্টারটিতে আগুন ধরে যায়। দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা যায় কপ্টারটি। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। সেই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছে একাধিক ভিডিও। বিপদ বুঝে আগেই কপ্টার ঝাঁপ দিয়ে দিয়েছিলেন পাইলট। কিন্তু তিনি প্রাণে বাঁচতে পারেননি। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। প্রাণ হারান আরও দু’জন।
সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, পোরবন্দরে অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার ধ্রুবের প্রশিক্ষণ চলছিল। কিন্তু হঠাৎ সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ফাঁকা মাঠে ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে সেটি। আগাম বিপদ বুঝরে পেরে কপ্টার থেকে ঝাঁপ দেন পাইলট। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, হেলিকপ্টারটি ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গোত্তা খেয়ে আছড়ে পড়ে বিমানবন্দরের রানওয়েতে। তার পরই আগুন ধরে যায়।
পোরবন্দরের পুলিশ সুপার ভগীরথসিংহ জাদেজা জানিয়েছেন, রবিবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনজন ক্রু সদস্যকে হেলিকপ্টার থেকে বের করে আনা হয় এবং গুরুতরভাবে দগ্ধ অবস্থায় পোরবন্দরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কমলাবাগ থানার পরিদর্শক রাজেশ কানমিয়া জানিয়েছেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা তিনজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল উপকূলরক্ষী বাহিনীর ‘এএলএইচ এমকে-থ্রি’ হেলিকপ্টার। মৃত্যু হয় দুই পাইলট-সহ মোট তিন জনের। ২০২৩ সালেও একাধিকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বাহিনীর কপ্টার। এখন সেনা, নৌসেনা, বিমান বাহিনী ও কোস্ট গার্ড মিলিয়ে ভারতের হাতে রয়েছে মোট ৩২৫টি বাহিনীর অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার ধ্রুব রয়েছে। কম যাত্রী-আরোহী নিয়ে অল্প দূরত্ব যাতায়াত, নজরদারি, প্রশিক্ষণের জন্য এই ধরনের হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়।
বছর দুয়েক আগে এএলএইচ ধ্রুব কপ্টারে একাধিক খামতি ধরা পড়ে। কপ্টার অবতরণের সময় দুর্ঘটনার মুখে পড়ে সেনা ও বায়ুসেনা। সেই সময় এই কপ্টারের ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। পরে সমস্ত নিরাপত্তা প্রোটোকল খতিয়ে দেখে এবং সেফটি অডিটের পরই ফের কপ্টার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ফের দুর্ঘটনা ঘটায় এবার সেফটি অডিট নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড বা হ্যালের তৈরি অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার ধ্রুব-তে রয়েছে দুটি ইঞ্জিন। এর ওজনও বেশ কম। সামরিক এবং বাণিজ্যিক দুই ক্ষেত্রেই এই কপ্টার ব্যবহার করা হয়। ২০০২ সাল থেকে উপকূলরক্ষী বাহিনী এই হাল্কা ওজনের কপ্টার ব্যবহার করে। পরিবহণ, তল্লাশি অভিযান, উদ্ধার অভিযান, দুর্গম এলাকায় ত্রাণ, খাবার কিংবা চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার মতো ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।