• facebook
  • twitter
Sunday, 27 April, 2025

২০২৪-এ যাঁদের হারিয়েছি

১৫ ডিসেম্বর প্রয়াত হন জাকির হুসেন। তালবাদ্য শিল্পী আল্লারাখার সুযোগ্য সন্তান জাকিরের তবলায় হাতেখড়ি হয় মাত্র ৩ বছর বয়সে। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ তিনটিই রয়েছে উস্তাদের ঝুলিতে। গ্রামিও পেয়েছেন তিনি।

ফাইল চিত্র

শেষ হয়েছে ২০২৪ সাল। নতুন বছর শুরু হয়েছে নতুন প্রত্যাশা ও নতুন স্বপ্ন নিয়ে। এই দুটি বছরের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে আমাদের মনে ভাসছে ‘স্মরণবেদনার বরনে আঁকা’ কিছু ছবি। তারই মধ্য থেকে কয়েকটি মুখ আমরা এখানে তুলে ধরলাম পরম শ্রদ্ধায়— সংস্কৃতি, খেলা, শিল্প ও রাজনীতির ক্ষেত্রে যাঁদের উল্লেখযোগ্য অবদান আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করেছে। 

উস্তাদ রশিদ খান— ৯ জানুয়ারি। ভারতীয় সংগীতের এক উদাত্ত কণ্ঠশিল্পী উস্তাদ রশিদ খান পাড়ি দিয়েছেন সুরলোকে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। উত্তরপ্রদেশে বদায়ুঁ ঘরানার অন্যতম সেরা শিল্পী ছিলেন তিনি। ৫৬ বছরের জীবনে তাঁর সুরের মূর্ছনায় অগণিত শ্রোতার হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন তিনি।

শ্রীলা মজুমদার— ২৭ জানুয়ারি। প্রয়াত হয়েছেন ভারতীয় প্যারালাল সিনেমার অন্যতম অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। ৩ বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। ১৬ বছর বয়সে মৃণাল সেনের হাত ধরে সিনেমায় পদার্পণ তাঁর। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘মান্ডি’, ‘দামুল’।

অঞ্জনা ভৌমিক— ১৭ ফেব্রুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিক। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মানেন তিনি। ছয় থেকে আটের দশকে বাংলা সিনেমার পর্দায় দাপিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘চৌরঙ্গী’, ‘রাজদ্রোহী’ ‘কখনো মেঘ’-এর মতো ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে। উত্তমকুমারের সঙ্গে মোট জুটি বেঁধে ৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন।

পঙ্কজ উদাস— ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন জনপ্রিয় গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস। বার্ধক্যজনিত সমস্যায় তাঁর মৃত্যু বলে জানিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। গায়কী এবং সুর এই দুইয়ের মেলবন্ধনে তিনি গজলকে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। আটের দশকে একের পর এক হিন্দি ছবির গানেও শ্রোতাদের মন জয় করেছেন। ‘চিঠঠি আই হ্যায়’ গান তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়।

অংশুমান গায়কোয়াড়— ৩১ জুলাই লন্ডনের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার অংশুমান গায়কোয়াড়। ভারতীয় ক্রিকেট দলের নির্ভরযোগ্য ওপেনার ছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত দেশের হয়ে ৪০টি টেস্ট ও ১৫টি ওয়ানডে খেলেন তিনি। ভারতীয় দলের কোচও ছিলেন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য— ৮ আগস্ট ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শারীরিক অসুস্থতার জন্য দীর্ঘদিন ঘরবন্দি ছিলেন তিনি। ১৯৭৭-১৯৮২ পর্যন্ত প্রথম বাম সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৯-তে উপমুখ্যমন্ত্রী হন। ২০০১ থেকে ২০১১, পরপর দু’বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

উৎপলেন্দু চক্রবর্তী— ২০ আগস্ট প্রয়াত হন জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। আটের দশকে ‘ময়নাতদন্ত’, ‘চোখ’, ‘দেবশিশু’র মতো চর্চিত ছবি পরিচালনা করেছেন। জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক পুরস্কার, রাষ্ট্রপতি সম্মান ও বঙ্গবিভূষণ।

সীতারাম ইয়েচুরি— ১২ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বয়স হয়েছিলো ৭২ বছর। ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে দিল্লি এইমসে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ছাত্রাবস্থাতেই ১৯৭৪ সালে ভারতের ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

মনোজ মিত্র— থিয়েটার ও চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি শিল্পী মনোজ মিত্র প্রয়াত হয়েছেন ১২ নভেম্বর। শম্ভু মিত্র ও উৎপল দত্ত পরবর্তী বাংলার নাট্যজগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্দেশক ও অভিনেতা ছিলেন তিনি। নাট্যগোষ্ঠী ‘সুন্দরম’-এর প্রতিষ্ঠাতা মনোজ মিত্র। ‘পরবাস’, ‘কেনারাম বেচারাম’, ‘অলকানন্দার পুত্রকন্যা’, ‘নরক গুলজার’-এর মতো মঞ্চসফল নাটক উপহার দিয়েছেন। ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ তাঁর অভিনীত অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র।

রতন টাটা— ৯ অক্টোবর প্রয়াত হন শিল্পপতি রতন টাটা। ব্রিজ ক্যান্ডি হাসপাতালে জীবনাবসান হয় তাঁর। টাটা গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম পুরোধা তিনি। টাটা গ্রুপের অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান থাকাকালীন শিল্প সংস্থাকে পুরোপুরি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করেন রতন টাটা। ২০০০ সালে পদ্মভূষণ ও ২০০৮ সালে পদ্মবিভূষণে তাঁকে সম্মানিত করে ভারত সরকার।

উমা দাশগুপ্ত— ১৮ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন উমা দাশগুপ্ত। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’তে কিশোরী দুর্গার অভিনয় করে কিংবদন্তিতে পরিণত হন উমা। একটাই ছবিতে অভিনয় করার পর অন্তরালে চলে গেছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন উমা দাসগুপ্ত।

জাকির হুসেন— ১৫ ডিসেম্বর প্রয়াত হন জাকির হুসেন। তালবাদ্য শিল্পী আল্লারাখার সুযোগ্য সন্তান জাকিরের তবলায় হাতেখড়ি হয় মাত্র ৩ বছর বয়সে। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ তিনটিই রয়েছে উস্তাদের ঝুলিতে। গ্রামিও পেয়েছেন তিনি। জাকির হুসেনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেলো ভারতীয় সংগীতের উজ্জ্বল, বর্ণময় অধ্যায়।

শ্যাম বেনেগাল— ৯০ বছর বয়সে ২৩ ডিসেম্বর প্রয়াত হলেন ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি পরিচালক শ্যাম বেনেগল। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্রকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন স্বনামধন্য এই পরিচালক। বিষয়-বৈচিত্র ও ভাবনার দিক থেকে তিনি বরাবরই ছিলেন স্বতন্ত্র। তাঁর পরিচালিত ছবি ‘মন্থন’, ‘অঙ্কুর’, ‘ভূমিকা’, ‘জুনুন’, ‘মান্ডি’, ‘নিশান্ত’ ভারতীয় সিনেমার মাইলফলক।

মনমোহন সিং— ২৬ ডিসেম্বর প্রয়াত হন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বয়স হয়েছিল ৯২। বয়সজনিত অসুখে ভুগছিলেন মনমোহন। ১৯৯১ সালে প্রথমবার রাজ্যসভার সদস্য হন। উদার অর্থনীতিকরণের মুখ্য রূপকার তিনিই। ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে পরপর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং।