দিল্লি, ২৩ জুলাই – প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের রেকর্ড ভেঙে একটানা সপ্তমবার দেশের ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম বাজেটে কর ছাড় থেকে শুরু করে সোনা, রূপো, প্ল্যাটিনাম, মোবাইল, ও ফোনের চার্জারের দাম কমল। ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ওষুধের শুল্ক কর সম্পূর্ণভাবে মকুব করা হল। নতুন আয়কর কাঠামোতেও বড়সড় বদল আনল কেন্দ্রীয় সরকার। সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা আয়ে কোনও কর বা ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে না চাকরিজীবী সাধারণ মানুষকে। পাশাপাশি, ৩ থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে করের পরিমান কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেটে। নতুন এই আয়কর কাঠামোয় বাড়ানো হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের হার। নতুন আয়কর কাঠামোয় বেতনভুক কর্মচারীদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৫০ হাজার থেকে বেড়ে হল ৭৫ হাজার টাকা। বিহার-অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য ঘোষণা করা হল বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ।
২০২৪-২৫ কেন্দ্রীয় বাজেটে নয়টি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অগ্রাধিকারগুলি মধ্যে রয়েছে চাকরি, সামাজিক ন্যায়বিচার, সুরক্ষা, উৎপাদনশীলতা, নগরোন্নয়ন, পরিকাঠামো, জ্বালানি, উদ্ভাবন ও সংস্কার। নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘ অগ্রাধিকারের পাশাপাশি চারটি স্তম্ভের কথাও অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছিল। আমাদের যে চারটি বিভাগে লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলি হল দারিদ্র্য, নারী, যুব সম্প্রদায় ও কৃষক।’
নির্মলা এদিন বলেন, জলবায়ু – সহনশীল বীজ বিকাশের জন্য যে গবেষণা হয়েছে তা নিয়ে পর্যালোচনা করেছে সরকার। তিনি বলেন, আগামী দুই বছরে এক কোটি কৃষককে প্রাকৃতিক চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে। গত দুই বছরে এক কোটি কৃষক প্রাকৃতিক চাষে এসেছেন বলে ঘোষণা করেন নির্মলা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানান, সরকার প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ আন্না যোজনা পাঁচ বছরের জন্য বাড়িয়েছে , যার ফলে উপকৃত হচ্ছে দেশের ৮০ কোটি মানুষ।
চলতি অর্থবর্ষে পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করা হবে ১১. ১১ লক্ষ কোটি টাকা, যা ভারতের জিডিপির ৩.৪ শতাংশ। পরিকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগেও উৎসাহ দেওয়ার কথা বাজেটে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী।
গ্রামোন্নয়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে ২.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে তিন কোটি অতিরিক্ত বাড়ি তৈরী করা হবে। ষিখাতে ১.৫২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। মহিলাদের উন্নয়নে বরাদ্দ ৩ লক্ষ কোটির বেশি। স্ট্যাম্প ডিউটি কমিয়ে মহিলাদের সম্পত্তি ক্রয়ে বিশেষ ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
উচ্চশিক্ষার জন্য পড়ুয়াদের ঋণ দেওয়া হবে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। প্রথম যাঁরা কাজের জগতে প্রবেশ করছেন , প্রভিডেন্ট ফান্ডে তাঁদের এক মাসের বেতন দেবে সরকার। ১ কোটি যুবক-যুবতীদের জন্য দেশের ৫০০ টি সংস্থায় ইন্টার্নশিপ প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করা হয় কেন্দ্রীয় বাজেটে।
অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারের উন্নয়নের জন্য চলতি অর্থবর্ষে বিশেষ ঘোষণা করা হয় কেন্দ্রীয় বাজেটে। অন্ধ্রপ্রদেশের উন্নয়নে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। বিহারের ক্ষেত্রে সড়ক যোজনা খাতে ২৬ হাজার কোটি এবং বিদ্যুৎ খাতে ২১ হাজার কোটি টাকার ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচ প্রকল্পের জন্য অসমকে বিশেষ আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। উপকৃত হবে সিকিম এবং উত্তরাখণ্ডও।
বাজেটে নয়া সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ১ কোটি ঘরে মাসে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুতের ঘোষণা করা হয়েছে।
সর্বোপরি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নতুন একটি নীতি আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার, যার পোশাকি নাম ‘ন্যাশনাল কো-অপারেশন পলিসি’। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এদিন বলেন, ভারতকে শক্তিশালী উন্নয়ন এবং সর্বাঙ্গীন সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকারকে একটি অনন্য সুযোগ দিয়েছে জনগণ।