ধর্ষণের মামলায় মিটমাটের সিদ্ধান্তে এসেছিল উভয় পক্ষ। এর জেরে গুজরাট হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গিয়েছিল মামলা। নির্যাতিতার পরিবার এবং অভিযুক্তের পরিবারের মধ্যে লিখিত চুক্তি হয়। কিন্তু সেই চুক্তিতে কি রয়েছে সে সম্পর্কে আদৌ জানতেন নিরক্ষর নির্যাতিতা ? এই প্রশ্ন তুলে মামলাটি নতুন করে শোনার জন্য নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ ম্যাসির বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, লিখিত চুক্তি সম্পর্কে নির্যাতিতা অবগত কি না, তার প্রমাণ না দিয়েই কীভাবে মামলা খারিজ করল হাই কোর্ট ? চুক্তিপত্রে কী লেখা রয়েছে, তা নির্যাতিতার কাছে ব্যাখ্যা করেননি কেউই। অথচ, ওই দলিলে নির্যাতিতার বুড়ো আঙুলের ছাপ রয়েছে।
শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, হাই কোর্টের উচিত ছিল নির্যাতিতাকে সশরীরে আদালতে ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া। এক্ষেত্রে যা করা হয়নি। ফলে উভয় পক্ষের ‘সম্মতিতে সমঝোতা’ হয়েছে কি না তা আবার নিশ্চিত করতে হবে গুজরাট হাই কোর্টকে। এরপরই মামলা খারিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে আদালত।
গুজরাটে নিরক্ষর এক আদিবাসী ধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতার বক্তব্য শোনার প্রয়োজন মনে করেনি হাইকোর্ট। অভিযুক্তের পেশ করা এক ‘সমঝোতা পত্র’ দেখেই আপসরফা হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেন বিচারপতি। অভিযুক্তের আবেদনে সাড়া দিয়ে গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি সমীর জে দাভে ধর্ষণের মামলা খারিজ করেন। এক বারও নির্যাতিতাকে ডেকে তাঁর বক্তব্য সরাসরি জানার বা সমঝোতা পত্রের সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন মনে করেনি হাইকোর্ট। এমন কাণ্ডে হতবাক সুপ্রিম কোর্ট।
নির্যাতিতার আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং সুপ্রিম কোর্টে জানান, নির্যাতিতা নিরক্ষর আদিবাসী তরুণী। তথাকথিত ‘সেটেলমেন্ট ডিড’–এর ভাষা গুজরাটি। তাতে এক পক্ষ হিসেবে নির্যাতিতার নামের জায়গায় টিপছাপ আছে ঠিকই , কিন্তু সেটা তাঁরই কিনা তার প্রমাণ নেই। তাঁর পক্ষে গুজরাটি পড়া সম্ভব নয়। তাঁকে পড়ে শুনিয়ে মতামত নেওয়া হয়েছে—এমন কোনও এনডোর্সমেন্টও নেই।
বিচারপতি ওকা জানান, কোনও বয়ানে টিপছাপের নীচে এনডোর্সমেন্ট–স্বাক্ষর থাকে তৃতীয় পক্ষের। এমন এনডোর্সমেন্টে ঘোষণা করতে হয়, টিপছাপ–প্রদানাকারীকে বয়ান পড়ে শোনানো ও বুঝিয়ে বলা হয়েছে। সেসব কিছু না থাকা সত্ত্বেও হাইকোর্ট কী করে একতরফা আবেদন শুনে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগের মামলা খারিজ করে দিল তা নিয়ে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
হাইকোর্টকেই পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার, প্রয়োজনে বিচারবিভাগীয় অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত করানোর কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট । নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই মামলার পুনর্বিচার করতে হবে গুজরাট হাইকোর্টকে। অবশ্যই শুনতে হবে তরুণীর বক্তব্য। যাচাই করতে হবে, ‘সেটেলমেন্ট ডিড’ সত্যিই তরুণীর সম্মতিতে তৈরি হয়েছে কিনা।
প্রসঙ্গত, উভয় পক্ষের সম্মতিতে মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে আদালতের তরফে একজনকে নিয়োগ করা হয়। তিনিই বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করেন। সাধারণত একজন আইনজীবীই এই দায়িত্ব পালন করে থাকেন।এই মামলায় সেইসব প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পালন করা হয়নি বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট।