‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি সংবিধানের ‘অপরিবর্তনীয়’ অংশ: সুপ্রিম কোর্ট  

Supreme Court of India. (Photo Courtesy: Twitter)

‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ এবং বেশ কয়েকটি রায়ে স্পষ্টভাবে একে অপরিবর্তনীয় অংশের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সোমবার ফের এমনটাই জানাল দেশের শীর্ষ আদালত। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ বলে, কেউ যদি সংবিধানে ব্যবহৃত সমতা এবং ভ্রাতৃত্বের অধিকারের পাশাপাশি তৃতীয় অংশের অধীনে মৌলিক অধিকারগুলির দিকে তাকানো যায় তবে স্পষ্ট হয় ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ।  ১৯৭৬ সালের ৪২-তম সংবিধান সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আনা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন এই পর্যবেক্ষণসুপ্রিম কোর্টের। সেই সময় সংবিধানের প্রস্তাবনা সংশোধন করে তাতে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দুটি সংযোজন করা হয়।

প্রস্তাবনা থেকে পরবর্তীকালে সংযোজিত ওই শব্দ দুটিকে বাদ দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে একাধিক আর্জি জমা পড়ে। এক্ষেত্রে কোনও নোটিস জারি করার দাবি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় যে, নভেম্বরে এ বিষয়ে রায় জানিয়ে দেওয়া হবে। বেঞ্চ এদিন বলে, ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি সংবিধানের মূল ভিত্তি যা যে কোনও অবস্থাতেই অপরিবর্তনীয়। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। আদালত এর আগেও বিভিন্ন রায়ে এই ধারণাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক উদারীকরণের পরেও সমাজতন্ত্র শব্দের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। 

বিচারপতি বলেন, ফরাসি মডেলের ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, ভারত নিজস্ব ধ্যানধারণার একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গঠন করেছে। বিচারপতি  বলেন, ‘যখন সংবিধান গৃহীত হয়েছিল এবং আলোচনা চলছিল তখন আমাদের কাছে কেবল ফরাসি মডেল ছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণাটি বিবর্তিত হয়েছে ভারতের ক্ষেত্রে। আমরা আরও অধিকার দিয়েছি, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছি।’ শুনানির সময় বিচারপতি খান্না বলেন, আপনারা কি চান না ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে থাকুক ? আবেদনকারী বলরাম সিংয়ের আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন জবাবে বলেন, ‘আমরা বলছি না যে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ নয়। আমরা সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।’ আম্বেদকরের উদাহরণ টেনে বলেন তিনি বলেন, ‘বাবাসাহেব মনে করতেন সমাজতন্ত্র শব্দটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে। 


প্রসঙ্গত , প্রস্তাবনা সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে বলরাম সিং, প্রবীণ বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এবং অ্যাডভোকেট অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায় পিটিশন দায়ের করেছিলেন।

এর উত্তরে বিচারপতি খান্না বলেন, সমাজতন্ত্রের মানে সকলের জন্য সমান সুযোগ, সম্পদের উপর সমান অধিকার। পশ্চিমী সমাজতন্ত্রের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। বেঞ্চ বলে, কয়েকটি রায় রয়েছে যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে ধর্মনিরপেক্ষতা মৌলিক কাঠামোর অংশ এবং মৌলিক কাঠামো হিসাবে একে অপরিবর্তনীয় অংশের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।