• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া আমাদের কাজ নয়, সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালীন আইনজীবীকে ধমক প্রধান বিচারপতির

আরজি কর মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারকে একাধিক নির্দেশ দিল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ফের জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার আবেদন জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।

আরজি কর মামলার শুনানি চলাকালীন রাজ্য সরকারকে একাধিক নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। আরও একবার জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার আবেদন জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। এদিন শুনানি চলাকালীন এক আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। ওই আইনজীবী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি জানান। এই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। আপনি যদি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের নির্দেশ দিতে হবে, সেটা হতে পারে না। এটা আমাদের কাজ নয়।’ রাজ্যের তরফে কত মিনিটের ফুটেজ দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে রাজ্য ও সিবিআইয়ের আইনজীবীর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়।

৯ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে সিবিআই জানিয়েছিল মাত্র ২৭ মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া হয়েছে । কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল এদিন দাবি করেন, সিবিআইকে সাত–আট ঘণ্টার ফুটেজ দেওয়া হয়েছে। এরপরই রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, তা হলে সিবিআই বলছে কেন যে ২৭ মিনিটের ফুটেজ দেওয়া হয়েছে? জনস্বার্থ মামলাকারী বিজয়কুমার সিঙ্ঘলের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজির দাবি, সিসিটিভি ডিভাইস ব্লক করা হয়ে থাকতে পারে। পাশাপাশি সিজার লিস্টে নির্যাতিতার জিন্স ও অন্তর্বাস না নেওয়া প্রসঙ্গেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

নির্যাতিতার বাবা যে সব বিষয় তুলে ধরেছেন সেগুলি সিবিআইকে খতিয়ে দেখতে বললেন প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি নির্যাতিতার নাম মুছে ফেলতে উইকিপিডিয়াকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত এদিন জানায়, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার দিন ঘটনাস্থালে যারা ছিলেন তাঁদের নাম জমা করতে পারবেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেগুলি খতিয়ে দেখে সিবিআইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্টবেঙ্গল চিকিৎসক সংগঠনের আইনজীবী করুণ নন্দী সুপ্রিম কোর্টে জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে না। সিনিয়র চিকিৎসকরা আগের মতোই কাজ করছেন। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তা ঠিক করার নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। এপ্রসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবীর তরফে বিজ্ঞপ্তির ‘বিতর্কিত’ অংশ মুছে ফেলার আশ্বাস দেওয়া হয়।

চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য রাজ্যের তরফে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘আবার নিরাপত্তার দায়িত্বে অস্থায়ী কর্মী রাখবেন? যেখানে সব সময় কাজ চলছে। ডাক্তাররা ৩৬ ঘণ্টা কাজ করছেন। সেখানে এমন নিরাপত্তা কেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে কীভাবে তাঁদের থেকে উপযুক্ত নিরাপত্তার আশা করেন? কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্বে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করতে পারে রাজ্য? রাজ্যের এই বিষয়ে ভাবা উচিত।

চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ হলে নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক।’ এরপর সরকারি হাসপাতালে পুলিশকর্মী রাখা উচিত হবে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। আদালতে রাজ্য জানায়, হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রাম কক্ষ, সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে। শুধুমাত্রা আরজি কর মেডিক্যালেই ৪১৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে। আগে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা ছিল ৩৭টি। চিকিৎসকদের ডিউটি রুমেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানায় রাজ্য।

টানা প্রায় ৩৯ দিনের বেশি সময় ধরে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার আর্জি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল প্রশ্ন করেন, চিকিৎসকরা কবে কাজে ফিরবেন ? এপ্রসঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং জানান, মঙ্গল বা বুধবার জিবি বৈঠক করে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

উল্লেখ্য, সোমবার কালীঘাটের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসি নর্থ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হলে কর্মবিরতি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি কাজে না ফেরার জন্য যে নিরাপত্তাহীনতাই মূল কারণ তা এদিন সুপ্রিম কোর্টে সাফ জানিয়ে দেন চিকিৎসকদের যৌথমঞ্চের আইনজীবী। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের ফের কাজে যোগদানের আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। তবে কাজে ফিরলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দেন তিনি। নিরাপত্তার স্বার্থে মনিটরিং কমিটি তৈরির নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ।