আর জি কর হাসপাতালে খুন ও ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে আবার কাজে ফেরার অনুরোধ জানাল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, যদি শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা কাজে যোগ না দেন, তাহলে তাঁদের অনুপস্থিত বলে গণ্য করা হবে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার বলে, তাঁরা প্রশাসনের কাছে ‘উপস্থিত’ বলে দাবি করতে পারবেন না। একইসঙ্গে বেঞ্চের আশ্বাস, কাজে ফিরলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবে না কর্তৃপক্ষ। তাঁদের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করা হবে।কাজের ক্ষেত্রেও তাঁদের কোন অসুবিধে হবে না। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টে শুনানির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২১ সদস্যের একটি আইনি দল গঠন করেছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল ।
ফের একবার চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শেষ করে কাজে ফেরার অনুরোধ করল সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে কাজে যোগ দেওয়ার পর আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ যেন না করা হয়, তা নিশ্চিত করার আশ্বাসও দেওয়া হয় শীর্ষ আদালতের তরফে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এদিন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে চূড়ান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘ প্রথমে কাজে ফিরুন। তারপর সেখানে কোন সমস্যা হলে আমাদের জানান। কিন্তু চিকিৎসকরা যদি কর্মবিরতি চালিয়ে যান, তবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। রোগীরা যদি পরিষেবা না পান , তাহলে সমস্যা হবে। আমরা আশ্বাস দিচ্ছি কাজে ফিরলে চিকিৎসকদের কোন সমস্যা হবে না। ‘ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে এদিন এই শুনানি হয়।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার গোটা দেশ। শুধু কলকাতার চিকিৎসকরাই নন, প্রতিবাদে পথে নেমেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসকরাও। সুবিচারের দাবিতে এবং হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকেরা। বৃহস্পতিবার আরজি কর মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের তরফে ফের একবার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আবেদন জানানো হল।
এ দিন মামলার শুনানির শুরুতেই চিকিৎসকদের তরফে হাজির আইনজীবী শীর্ষ আদালতে জানান যে কর্মবিরতিতে সামিল চিকিৎসকদের নিশানা করা হচ্ছে। অনেককেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না অথবা তাঁদের ছুটি কাটা হচ্ছে। সকালে আন্দোলনে সামিল হয়ে, ফের ডিউটিতে যোগ দিলেও জরিমানা করা হচ্ছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা, যাঁরা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা কখনও এমন কিছু করবেন না”। এর পরিপ্রেক্ষিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন যে শীর্ষ আদালতের আশ্বাস চিকিৎসকদের কিছুটা ভরসা দেবে।
এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, “চিকিৎসকরা কাজে যোগ দিলে, কর্তৃপক্ষ যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তা নিশ্চিত করব আমরা। তবে চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে হবে। চিকিৎসকরা কাজে যোগ না দিলে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কীভাবে কাজ করবে? চিকিৎসকরা কাজে যোগ দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। যদি এরপরও কোনও সমস্যা হয়, তবে ফের আদালতে আসুন।”প্রসঙ্গত, নাগপুর এইমসের কাউন্সিল ফর রেসিডেন্ট ডক্টরস বেঞ্চকে জানায়, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে নেমে তাঁদের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে ৷
প্রসঙ্গত, আর জি কর হাসপাতালে ডাক্তার-ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় দেশের ডাক্তারদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই মামলার শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি বলেন, এই ঘটনাটি মাত্র একটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট একটি ধর্ষণের বিষয় আর নেই। দেশজুড়ে সমস্ত চিকিৎসকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার এর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে।
দেশের সর্বত্র হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ১০ সদস্যের জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছে তিন বিচারপতির এই বেঞ্চ ৷ জাতীয় টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্বে রয়েছেন সার্জন ভাইস অ্যাডমিরাল আরপি সারিন ৷ এই কমিটি হাসপাতালে নারী-পুরুষ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখে জাতীয় স্তরে একটি প্রোটোকল তৈরি করবে ৷ তাঁদের কাজের সুযোগ-সুবিধার দিকটিও থাকবে প্রোটোকলের মধ্যে ৷ এই জাতীয় টাস্ক ফোর্সকে তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে আদালতে ৷ দু’মাসের মধ্যে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট শীর্ষ আদালতে পেশ করতে হবে ৷