দিল্লি, ১২ জানুয়ারি – মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ নিয়ে নতুন আইন এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়া হল তার ব্যাখ্যা চায় শীর্ষ আদালত। তবে কেন্দ্রের পাশ করানো ওই আইনে এখনও স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক আবেদন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে, তার প্রেক্ষিতেই নোটিস পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
চলতি বছরের বাদল শীতকালীন অধিবেশনে পাশ করা হয় নির্বাচন কমিশনার আইন, ২০২৩। সেই আইনে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যে প্যানেল হয়, তা থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়া হয়। এই নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। এর আগে যখন খসড়া আইনটি পেশ করা হয়, তখনও আপত্তি জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের তরফে সাফ জানানো হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্যানেল থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রতিনিধিকে বাদ দেওয়া যাবে না।
গত বছর মার্চ মাসে এক ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে মন্ত্রিসভার হাতে থাকবে না। এদের নিয়োগ করবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং প্রধান বিচারপতির যৌথ কমিটি। এই কমিটির সুপারিশ মেনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। যদি কখনও লোকসভায় বিরোধী দলনেতা পদে কেউ না থাকেন, তাহলে বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতাকেই এই কমিটিতে নেওয়া হবে। যার ফলে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের অধিকার ন্যস্ত হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের কমিটির উপর।
কিন্তু শীতকালীন অধিবেশনে পালটা আইন এনে সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় কার্যত বাতিল করে দেয় কেন্দ্র। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (সংশোধনী) বিল অনুযায়ী, এবার থেকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির কোনও ভূমিকা থাকবে না। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ করা মন্ত্রিসভার এক সদস্য। অর্থাৎ ৩ সদস্যের কমিটির দুই সদস্যই হবেন সরকারি প্রতিনিধি। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনার পদে কারণ নাম নিয়ে বিরোধী দলনেতার আপত্তি থাকলেও সংখ্যাধিক্যের বলে সরকার তাঁকে উপেক্ষা করতে পারবে। শীতকালীন অধিবেশনে এই বিল দুই কক্ষেই পাশ হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে সেটি আইনেও পরিণত হয়েছে।
সেই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। এই সব বিষয়ের উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন কংগ্রেস নেত্রী জয়া ঠাকুর। তিনি দাবি করেন, আইনটি বাতিল করে দিক সুপ্রিম কোর্ট। কারণ, শীর্ষ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে নয়া আইন তৈরি হয়েছে। তাতে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে নিরপেক্ষতা রক্ষার কোনও সুযোগ নেই। জয়া ঠাকুর মামলাটি শুনানির জন্য সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠনেরও আর্জি জানান। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চ এই আইনের ব্যাখ্যা চেয়ে কেন্দ্রকে নোটিস পাঠিয়েছে।