মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে রাজ্যের বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট 

রাজ্যে বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসনকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।  শীর্ষ আদালত সতর্ক করে বলেছে যে, অবিরাম কাজ থেকে বিরত থাকলে চিকিৎসকেরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জন্য দায়ী হতে পারে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে শীর্ষ আদালত উল্লেখ করেছে যে গত ২৮ দিন ধরে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থাকে আঘাত করেছে।
 
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে কর্মস্থলে নির্মমভাবে ধর্ষণ ও খুন করার ঘটনার ঠিক একমাস পূর্ণ হয়েছে  ৯ আগস্ট। এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হলেও এখনো রহস্যে মোড়া নানা দিক , যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা , জুনিয়র চিকিৎসক এবং নাগরিকদের একটি বড় অংশ। তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকেই আন্দোলন শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। বিচারের দাবিতে পথে নেমেছেন তাঁরা। আরজি করের সামনে চলছে অবস্থানও। রাজ্য সরকারের তরফে বার বার তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানালেও কাজে ফেরেননি জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সোমবারের শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ উঠলে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, দ্রুত কাজে যোগ দিন চিকিৎসকরা ।
 
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা ও মনোজ মিশ্রের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করেন। সোমবারের  শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে যোগ দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ হবে না, আমরা তো বলেছি। আগামিকাল বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘এর পরেও যদি কোনও চিকিৎসক কাজে যোগ না দেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য কোনও পদক্ষেপ করলে আমরা বাধা দিতে পারব না।’’ পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে এ-ও জানায়, আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা জেনে তবেই পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্যকে।
 
সোমবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা জানি বাস্তবে কী ঘটছে। কিন্তু চিকিৎসকদের এখন কাজে ফিরে আসতে হবে, তারা বলতে পারে না সিনিয়র চিকিৎসকরা কাজ করছেন তাই আমরা কাজ করব না। আমরা সবাইকে নোটিশে রেখেছি।” শীর্ষ আদালত বলে “বিক্ষোভ তাদের দায়িত্বের মূল্যে হতে পারে না।”
 
এর পরই রাজ্যকে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আপনারা নিশ্চিত করুন, যাঁরা কাজে যোগ দেবেন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবেন না। এমনকি তাঁদের বদলি করাও যাবে না। রাজ্য সরকার তাঁদের সুরক্ষা দেবে। ’’ শীর্ষ আদালত বলে, জুনিয়র চিকিৎসকেরা মঙ্গলবার বিকেল ৫ তার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে , আদালত আর রাজ্য সরকারকে আটকাতে পারবে না. কাজে অনুপস্থিতির কারণে তখন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে রাজ্য।  
 
এদিন আর জি কর মামলায় দ্বিতীয় দফার শুনানিতে বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী গীতা লুথরা। তিনি বলেন, শুধু কলকাতা নয়, বিভিন্ন জেলা হাসপাতালেও জুনিয়র চিকিৎসকেরা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। কর্মবিরতি প্রসঙ্গে লুথরা বলেন, সিনিয়র চিকিৎসকেরা কাজ করছেন। ফলে পরিষেবা ব্যাহত হয়নি।
 
পালটা রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলের বক্তব্য, জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে ২৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৬ লক্ষ রোগী বিপদের মুখে। বহু রোগীর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি আটকে রয়েছে। এবার তাঁদের কাজে ফেরাতে রাজ্য পদক্ষেপ নিতে চায়। শীর্ষ আদালতের কাছে সেই অনুমতি চান সিব্বল। রাজ্যের পক্ষে উপস্থিত হয়ে এই আইনজীবী এদিন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়ের করা একটি স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেন সুপ্রিম কোর্টে।  তিনি বেঞ্চকে বলেন, ‘একটি স্টেটাস রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ একটি রিপোর্ট দাখিল করেছে।  চিকিৎসকেরা ধর্মঘটে থাকায় ২৩ জন মারা গিয়েছেন।  
 
উল্লেখ্য, আর জি করে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে কোন্নগরের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদও।  কোন্নগরের বাসিন্দা বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের দাবি, জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির শিকার হয়েছেন তাঁদের ছেলে। কেবল আরজি কর নয়, অন্যান্য হাসপাতালেও চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জন্য একাধিক রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সেই তালিকায় রয়েছে এসএসকেএমের মতো হাসপাতালও। কেবল কলকাতা নয়, রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও বিনা চিকিৎসায় রোগীমৃত্যুর অভিযোগ আসছে ।
 
এই আবহে আরজি কর মামলার শুনানিতে সোমবার চিকিৎসকদের প্রতি কড়া বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার আর জি কর মামলার শুনানির সময়ে শীর্ষ আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরতে হবে চিকিৎসকদের। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যদি তাঁরা কাজে না ফেরেন, তাহলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে পারে রাজ্য। তবে আদালত এটাও জানায়, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যকে।  চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় কাজ করবেন এসপি এবং জেলাশাসকরা। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো থেকে শুরু করে আরও নানা পদক্ষেপ করা হবে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। তবে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতেই হবে। 
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা জানালেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তাঁরা। তবুও, সব দিক খতিয়ে দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সব চিকিৎসককে নিয়ে একটি জেনারেল বডি মিটিংয়ের পর জানিয়ে দেওয়া হবে পরবর্তী কর্মসূচি।
 
সোমবার দুপুরেই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে কী বলছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা?
 
আরজি করের এক আন্দোলনরত চিকিৎসক জানাচ্ছেন, আরজিু কর মামলার শুনানিতে হতাশ হয়েছেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করবেন তাঁরা। কিন্তু এই আবহে পরবর্তী কালে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তা এখনও স্থির করেননি তাঁরা। আপাতত প্রতিটি কলেজ এবং হাসপাতালের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা পৃথক পৃথক ভাবে একটি প্রাথমিক বৈঠক করবেন। এর পর বিকাল ৫টা নাগাদ আরজি কর-সহ সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক মিলে একটি সম্মিলিত জেনারেল বডি বৈঠক (জিবি) করবেন। সেই বৈঠকের পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।