সন্তানের পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু চাইলেও অনুমতি দিল না শীর্ষ আদালত 

নিজেদের সন্তানের পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে  সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বৃদ্ধ  মা  –   বাবা।  মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি হরিশ রানার বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত ওই যুবকের পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুতে অনুমতি দেয়নি।    তাঁকে অন্য কোনও সরকারি হাসপাতালে বা অন্য কোনও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পরিষেবা দেওয়া যায় কি না, সেই বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে চায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। সেই জন্য কেন্দ্রের তরফে মতামতও জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।   

দীর্ঘ ১১ বছর ধরে অচেতন অবস্থায় রয়েছেন বৃদ্ধ দম্পতির বছর তিরিশের যুবক। সন্তানের এই পরিস্থিতি দেখতে দেখতে হতাশ দম্পপ্তি পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০১৩ সালস এক দুর্ঘটনার পর থেকেই বদলে যায় এই দম্পতির জীবন। একটি বহুতলের পাঁচতলা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন তাঁদের সন্তান। তার পর থেকেই  গত ১১ বছর ধরে হাসপাতালে ভর্তি। জীবিত থাকলেও আজও তাঁর কোনও অভিব্যক্তি বা সাড়া  নেই। চিকিৎসার পরিভাষায় একে ‘ভেজিটেটিভ স্টেট’ বলা হয়ে থাকে। মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাতের কারণে এই পরিস্থিতি হতে পারে।  দীর্ঘ সময় ধরে পুত্রের চিকিৎসা করাতে করাতে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত বৃদ্ধ বাবা-মা আর্থিক দিক থেকেও নিঃস্বপ্রায় । সন্তানের চিকিৎসার জন্য নিজেদের বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছেন।
 
এই পরিস্থিতিতে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে  এর আগে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। কিন্তু সেখানে যুবকের পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। হাই কোর্টে তাঁরা আবেদন জানিয়েছিলেন যাতে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। সেই আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়। এর পর  শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন ওই যুবকের মা-বাবা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, হাই কোর্টের সিদ্ধান্তই সঠিক। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, যে রোগী ভেন্টিলেটর বা অন্য কোনও বাহ্যিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই জীবিত রয়েছেন, ইঞ্জেকশন দিয়ে তাঁর প্রাণের স্পন্দন কোনও চিকিৎসক বন্ধ করতে পারেন না । তবে অনুমতি না দিলেও, তাঁকে অন্য কোনও সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা যায় কি না, সেই সম্ভাবনাময় দিকগুলি বিবেচনা করে দেখতে চায় শীর্ষ আদালত।
 
পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর অর্থ কাউকে জীবিত রাখার জন্য ব্যবহৃত বাহ্যিক প্রযুক্তির সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু এই যুবকের ক্ষেত্রে, ১১ বছর ধরে হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় ভর্তি থাকলেও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভেন্টিলেশন বা অন্য কোনও বাহ্যিক প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়নি। নলের মাধ্যমে তাঁর শরীরে খাদ্যও প্রবেশ করানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুতে অনুমতি দিল না ।