আরজি কর মামলায় ১২ সপ্তাহের মধ্যে টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট চাইল সুপ্রিম কোর্ট 

ফাইল চিত্র।

আরজি কর মামলায় শীর্ষ আদালত গঠিত ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের কাছে চূড়ান্ত রিপোর্ট চাইলেন বিচারপতিরা। মঙ্গলবার দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চে আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনেরমামলার অষ্টম শুনানি হল। ট্রায়ালের কী পরিস্থিতি, তা জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার প্রথমবার সুপ্রিম কোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এই মামলা ওঠে। 
 
ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স-কে এদিন থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুই সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানতে চায়, নিম্ন আদালতে এই মামলার বিচার কোন পর্যায়ে রয়েছে ? উত্তরে আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার বলেন, ‘শিয়ালদহ আদালতে প্রতিদিন ট্রায়াল চলছে।’  শীর্ষ আদালত জানায়, কোনও পক্ষের যদি মনে হয় বিচারে দেরি হচ্ছে তাহলে তারা দ্রুত শুনানির আবেদন করতে পারে। 
ট্রায়াল কোন পরিস্থিতিতে আছে, প্রধান বিচারপতি জানতে চাইলে আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার বলেন,  ‘ট্রায়াল চলছে। ৪৩ জন প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ট্রায়াল শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তুষার মেহতা বলেন,  ‘দুই ধরনের অভিযুক্ত রয়েছেন। প্রথমত ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় জড়িত। দ্বিতীয়ত প্রমাণ লোপাটে জড়িত। তৃতীয় ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রয়েছে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন,  ‘অভিযুক্তের ডিএনএ রিপোর্ট ম্যাচ করেছে ?’ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন,  ‘ম্যাচ করেছে।’ বৃন্দা গ্রোভার বলেন, ‘রিপোর্ট ইতিমধ্যেই কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে।’

আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে কি না, শুনানিতে তা জানতে চেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।  রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলে সিবিআই। আরজি কর মামলায় সিবিআইয়ের হয়ে সওয়াল করছিলেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি আদালতে অভিযোগ করেন যে, আর্থিক দুর্নীতির মামলায় দুই অভিযুক্ত সরকারি পদে কাজ করেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যের তরফে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তুষার আদালতকে জানান, ২৭ নভেম্বর রাজ্যের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। ২৯ নভেম্বর চার্জশিট দেওয়া হয়।

সিবিআইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, “আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই।” তার পরেই প্রধান বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন।” বিষয়টিতে নজর দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।


প্রসঙ্গত, আরজি কর আর্থিক দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সরকারি কর্মচারী। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ কিংবা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হলে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু সিবিআইয়ের অভিযোগ, রাজ্যের কাছে প্রয়োজনীয় অনুমতি চাওয়া হলেও এখনও পাওয়া যায়নি। তাই মূল চার্জশিটে দুই অভিযুক্তের নাম রাখা যায়নি। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জশিট দিয়ে ওই  ২ জনের  নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

প্রসঙ্গত নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তিন অভিযুক্ত সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোককুমার সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, এঁরা  সরকারি কর্মচারী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ কিংবা বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য মুখ্যসচিবের অনুমতির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মুখ্যসচিব সেই অনুমতি দেননি বলে দাবি তদন্তকারী সংস্থার। সিবিআইয়ের অভিযোগ শোনার পর রাজ্যকে ‘প্রয়োজনীয় পদেক্ষেপ’ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি ২০২৫ এর ১৭ মার্চ।