দিল্লি, ২৭ জুন– রামমন্দির নির্মাণ শুধু দেশে নয় গোটা বিশ্বের কাছে আলোচনার বিষয় ছিল৷ রামমন্দির কারো কাছে বিজেপির হিন্দু ধর্ম প্রচারের সর্বোচ্চ মাধ্যম ছিল তো কারোর কাছে বিপুল অর্থের অপব্যয়৷ আবার কারোর কাছে এটা ধর্ম-সংস্কৃতির এক আশ্চর্য স্থাপনাও বটে(যদিও সম্প্রতি মন্দিরের গর্ভগৃহে জল চুঁয়ে পড়ার ঘটনা নির্মাণের মাত্র ছয়মাসের মধ্যেই ঘটেছে)৷ কিন্তু সেই রামমন্দিরই আবার উঠে এসেছে নোবেল জয়ী অমার্ত্য সেনের রোষানলে৷ অমর্ত্য সেন অযোধ্যার রামমন্দির নিয়ে বিজেপিকে দুষলেন৷ অমর্ত্যের মতে মন্দির নির্মাণের মাধ্যমে ভারতকে আসলে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ এই চেষ্টার ফলে ভারতের অন্তরাত্মাকে উপেক্ষা করা হয়েছে৷ এই প্রয়াস ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চাই, বলেন অমর্ত্য সেন৷
কড়া ভাষায় বিজেপিকে দুষে অমর্ত্য সেন বলেন, রামমন্দির নিয়ে দেশের প্রকৃত চেহারাকে ঢেকে ফেলার চেষ্টা হয়েছে৷ তবে ভারতের জনগণকে বোকা বানাতে পারেনি বিজেপি৷ তারই প্রকাশ অযোধ্যা বিধানসভা কেন্দ্রের ফৈজাবাদ লোকসভা আসনে বিজেপির ভরাডুবি৷
তবে শুধু রামমন্দির নয়, নোবেলজয়ীর কথায় উঠে এসছে বিজেপির নতুন মন্ত্রীসভার প্রসঙ্গও৷ তিনি বলেন, নতুন মন্ত্রিসভার সঙ্গে আগের খুব একটা বদল ঘটেনি৷ মন্ত্রীরাও প্রায় সকলেই একই মন্ত্রক পেয়েছেন৷ সামান্য অদলবদল হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতাশালীরা এখনও শক্তিশালীই রয়ে গিয়েছেন৷ রাজনীতিকে মুক্তমনা হতে হবে, বিশেষ করে আমাদের মতো ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের দেশের ক্ষেত্রে৷ তাঁর দৃষ্টিতে বেকারি বেডে়ই চলেছে এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্র প্রচণ্ড উপেক্ষিত এই দেশে৷
একইসঙ্গে অমর্ত্য মনে করেন, ভোটের ফলাফলই বলে দিচ্ছে ভারত যে ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ নয়, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে৷ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেন, রামমন্দির নির্মাণে বিপুল পরিমাণে অর্থ খরচ হয়েছে৷ এই বৈভব দেখানোর কারণ ছিল ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বলে প্রতিপন্ন করা৷ কিন্ত্ত, মহাত্মা গান্ধি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সুভাষচন্দ্র বসুর দেশে তা হওয়ার কথা নয়৷
নতুন আইনবিধিতে সঠিক বিচার ছাড়া মানুষকে লাগাতার গারদে ভরে রাখার বিষয়ে অসন্ত্তষ্টি প্রকাশ করেন সেন৷ এমনকী বিজেপি সরকারের সরাসরি সমালোচনা করে বলেন, এই পদ্ধতি কংগ্রেস আমলের তুলনায় বিজেপি সরকারের সময়ে বেশি প্রয়োগ হচ্ছে৷
অমর্ত্য সেনের কথায়, আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার অনেক কাকা ও তুতো ভাইদের বিচার ছাড়াই জেলে পুরে রাখা হয়েছিল৷ আমরা তখন ভাবতাম, একদিন ভারত এই অত্যাচারের হাত থেকে মুক্ত হবে৷ কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরেও এই প্রক্রিয়ার কিছুমাত্র বদল ঘটেনি৷ কোনও বদল আসেনি৷ কিন্ত্ত, বর্তমান সরকারের জমানায় সেটা আরও বেডে় গিয়েছে৷