‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে যখন দেশজুড়ে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে তখন সেই আগুনেই ঘি পড়লো বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় মন্তব্যে। প্রাক্তন ‘অগ্নিবীর’দের বিজেপির দফতরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিয়োগ করা হবে বলে মন্তব্য করতছেন তিনি।
আর এই মন্তব্য ঘিরেই রীতিমতো নিন্দার ঝড় ওঠে রাজনৈতিক মহলে। চাপের মুখে পড়ে অবশ্য সাফাইও দিয়েছেন বিজয়বর্গীয়।
সেনা প্রশিক্ষণের সবথেকে বড় বিষয় হলো নিয়মানুবর্তিতা ও আদেশের পালন করা। তিনি যখন চার বছর দেশসেবা করে বার হবেন তখন তাঁর হাতে ১১ লাখ টাকা থাকবে। পাশাপাশি তাঁর ছাতিতে অগ্নিবীরের তকমা থাকবে।
আমাকে যদি বিজেপির দফতরে নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হয় সেক্ষেত্রে অগ্নিবীরদের অগ্রাধিকার দেব। সোমবার এমনই মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। তাঁর এই মন্তব্যের পরেই সর্বত্র বিরোধিতার ঝড় ওঠে।
সোমবারই বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অগ্নিপথ আসলে বিজেপির ক্যাডার তৈরির প্রকল্প। এরাই ভোট লুট করতে সাহায্য করবে। পার্টি অফিসে পাহারা দেবে। বিজেপি আসলে গুন্ডা তৈরি করতেই চার বছরের এই ললিপপ দিয়েছে।
‘আপ’ সুপ্রিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, দেশের সেনাবাহিনীর সদস্য এবং তরুণদের এতটাও অসম্মান করবেন না।
আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম দিন রাত পরিশ্রম করে যাতে তাঁরা শারীরিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারে কারণ তাঁরা দেশ সেবা করতে চান। বিজেপি দফতরের সামনে রক্ষী হওয়ার জন্য নয়।
কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, শেষমেশ বিজেপির কেউ অগ্নিপথ নিয়ে যাবতীয় শঙ্কা দূর করল। আমাদের সেনারা আমাদের গর্ব। সত্যিকারের দেশভক্তরা কখনও তাঁদের এভাবে অপমান করবেন না।
এদিকে ‘অগ্নিপথ’ নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভের মাঝে সোমবার ভারত বন্ধ ঘোষণা করে কয়েকটি সংগঠন। কংগ্রেসও ভারত বন্ধকে সমর্থন করেছে। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ টুইট করে জানান যে, সারা দেশে লক্ষ লক্ষ কংগ্রেস কর্মীরা ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এবং তাদের নেতা রাহুল গান্ধীকে লক্ষ্য করে মোদী সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে।
ভারত বন্ধকে সমর্থন করেছেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইতও। তিনি বলেছিলেন, বিধায়ক ও সাংস্যদরা ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন আর পেনশনও পেতে পারেন, কিন্তু ৪ বছর চাকরির পর তরুণদের ওপর অবসর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়। আমরা এটা হতে দেব না। অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।
চলতে থাকা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দিল্লি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা টিকরি বর্ডার, সিন্ধু বর্ডার, অপ্সরা বর্ডার, গাজিপুর বর্ডার, বদরপুর বর্ডারে নিরাপত্তার বিষয়ে একটি বৈঠক করেন।
দিল্লি পুলিশের গোপন খবর অনুযায়ী, ‘অগ্নিপথ’-এর প্রতিবাদের আড়ালে বিপুল সংখ্যক ট্রাক্টর দিল্লির দিকে যাত্রা করতে পারে যে কোনও সময়।
ভারত বন্ধের ডাকে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ফরিদাবাদ পুলিশও। ফরিদাবাদে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি কড়া। এ জন্য বিভিন্ন পুলিশ পোস্ট বসিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফরিদাবাদ পুলিশ।
ভারত বন্ধের কারণে সোমবার ঝাড়খণ্ডের স্কুল বন্ধ থাকে। স্কুল শিক্ষা ও সাক্ষরতা বিভাগের সচিব রাজেশ কুমার শর্মা বলেন, বনধের প্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে সমস্ত সরকারী এবং বেসরকারী স্কুল বন্ধ থাকবে।
অন্যদিকে, সেনাবাহিনীতে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগের প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায় সোমবার। মঙ্গলবার প্রকাশ পাবে ভারতীয় নৌসেনায় ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। একদম শেষে বায়ুসেনা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।