“নির্যাতিতার নাম ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, কীভাবে এটা সম্ভব হল?” জানতে চাইল শীর্ষ আদালত 

আরজি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের মামলার শুনানি হল সুপ্রিম কোর্টে। বিষয়টি নিয়ে এদিন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি এদিন উল্লেখ করেন, নির্যাতিতার নাম সমস্ত মিডিয়ায় এবং ছবি ও ভিডিও গুলিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ঘটনা খুবই উদ্বেগের।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “নির্যাতিতার নাম ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকী ময়নাতদন্তের আগের ও পরের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেহ দেখা যাচ্ছে। একটা প্যারামিটার আছে, সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইনও আছে। তারপরও কীভাবে এটা সম্ভব হল?”

প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘পুলিশ যাওয়ার আগেই ছবি তোলা হয়েছে। আমরা পুরো জায়গাটা ঘিরে রেখেছিলাম।’


মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘একজন তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে, তাঁকে এইটুকু মর্যাদা দেওয়া উচিত।’ এছাড়া আরজি করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা ভয়ঙ্কর বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

প্রসঙ্গত, সোমবারই আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে নতুন এফআইআর দায়ের হয়েছে কলকাতা পুলিশে। তিনি বারবার প্রকাশ্যে নাম নিয়েছেন ধর্ষিত ও নিহত চিকিৎসকের। তাঁর সেই বক্তব্য টিভিতে সম্প্রচারও করা হয়। নির্যাতিতার নাম প্রকাশের অভিযোগে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে শেষমেশ পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয় । 

নিহত চিকিৎসকের নাম ও  ছবি  সোশ্যাল মিডিয়ায়  প্রকাশের অভিযোগে একাধিক লোকজনকে নোটিস পাঠিয়েছিল লালবাজার। এবার সেই অভিযোগই নতুন করে দায়ের হয়েছে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। আরজি করে চিকিৎসক খুনের ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে প্রবল চাপে পড়ে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমকে ডেকে নিজের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানানোর সময়ে নির্যাতিতা সেই চিকিৎসকের নাম বারবার করে উল্লেখ করেন তিনি, সেখান থেকেই তা ছড়িয়ে পড়ে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে। 

উল্লেখযোগ্য হল, নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে আনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইনই শুধু নয়, নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে আনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইনও রয়েছে। ভারতীয় আইনে ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঘটনায় নির্যাতিতার নাম, পরিচয় বা ছবি প্রকাশ করা যায় না। এমন কোনও তথ্য যা প্রকাশ করলে নির্যাতিতার পরিচয় জানা যেতে পারে, তাও প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু নিয়মবিরুদ্ধভাবে আরজি কর কাণ্ডে সে সবের তোয়াক্কা না করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নিহত চিকিৎসকের নাম ও ছবি। এমনকি তাঁর লেখা প্রেসক্রিপশনও ঘুরছে বিভিন্ন পোস্টে । এই নিয়েই মঙ্গলবার ক্ষোভ প্রকাশ করল  সুপ্রিম কোর্ট।