ভাষা এবং শব্দ ব্যবহারে অনেক বেশি সংযত থাকা প্রয়ােজন মন্ত্রীদের, মন্তব্য কাজ নিয়ে হওয়া উচিত পেশাদারিত্ব নিয়ে নয়- সাংবাদিক বরখা দত্তের প্রশ্নের উত্তরে স্বভাবসিদ্ধ মার্জিত ভঙ্গিতেই তাঁকে নিয়ে চলা রাজনৈতিক টানাপােড়েনের বিশ্লেষণ করলেন নােবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিন কয়েক আগেই নােবেল পেয়েছেন। তা নিয়ে এখনও উচ্ছ্বাস থিতিয়ে যায়নি। ইতিমধ্যেই তাঁর কাজ থেকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক মহল থেকে সােশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁকে নিয়ে চলতে থাকা বিতর্কের রেশটাকে মাথায় রেখেই অভিজিৎ বললেন, ‘মতপার্থক্য থাকতেই পারে। সে নিয়ে সমালােচনাও হয়। তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ভাষা এমনন হওয়া উচিত নয় যা একজন মানুষকে অপমান করে’।
নােবেলপ্রাপ্তির পরে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানালেও তাঁকে বাম-ঘেঁষা বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম আস্থাভাজন, রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়াল।
পুণের এক সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী বলেছিলেন, অভিজিৎ কংগ্রেসের ন্যায় প্রকল্পের গুণগান গেয়েছেন, তাঁর ভাবনাকে খারিজ করে দিয়েছে ভারতের জনতা। রেলমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরেই সমালােচনা শুরু হয় নানা মহলে। নিজের শো ‘বহেস উইথ বরখা’তে সাংবাদিক বরখা দত্ত প্রশ্ন করেন দারিদ্রদুরীকরণ, আদ্বিাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর কাজকে যেভাবে কটাক্ষ করেছেন রেলমন্ত্রী, তাতে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ভাবনা কী? এই প্রশ্নের জবাবে নােবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের মন্তব্যে আমি দুঃখিত। আমার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তােলা হয়েছে। আমি নিজেকে একজন সার্জন মনে করি যার কাজ রােগীকে ভালাে করা। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিগত পছন্দের কোনও জায়গা নেই’।
মােদি সরকারের সমালােচনা করার জন্যই কি কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে? আগের অভিজিৎ আর বর্তমানের অভিজিতের মনােভাবের মধ্যে ফারাক কতটা? উত্তরে অভিজিৎ বলেন, ‘গুজরাতে নরেন্দ্র মােদির মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়েও আমরা কাজ করেছি। সেই সরকার আমাদের খুবই সহযােগিতা করেছিল। আমাদের পরামর্শ মেনে তারা ভালাে ফলও পেয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু ও পঞ্জাবেও কাজ করেছি। আমার কাজ দুরূহ সমস্যার সমাধান করা। ভুল পরামর্শ দিয়ে বিপথে চালিত করা নয়’।
নােবেলজয়ী জানান, ন্যায় প্রকল্প নিয়ে তাঁর সঙ্গে যােগাযােগ করেছিল কংগ্রেস। কোথায় কত বরাদ্দ করা যায়, সেই নিয়ে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন তাদের। শুধু কংগ্রেস বলে নয়, বিজেপি এলে তাদেরও সবরকমভাবে সাহায্য করতেন তিনি। কারণ নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের চেয়ে দেশের উন্নতি তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অভিজিৎ একই সঙ্গে জানিয়েছে, অতীতে মনমােহন সিংহ সরকারেরও সমালােচনা করেছেন তিনি।
কংগ্রেস আমলেই জেএনইউ-এ উপাচার্যকে ঘেরাও করার দায়ে তাঁকে ১০ দিন কাটাতে হয়েছিল তিহার জেলে। ১৯৯৭ সালে পি চিদম্বরম যখন তাঁর বাজেট পেশ করেছিলেন তখনও সেই বাজেটের সমালােচনা করেছিলেন তিনি। তাহলে এখন এত কথা হবে কেন? তিনি বলেন, ‘এমন কোনও ব্যাপার নেই যে কোনও সরকারের আদর্শকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না বলে তাদের ভুল পরামর্শ দেব। কারণ আমি মনে করি সেটা চূড়ান্ত অপেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়’।