• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে ন্যায় সংহিতা 

দিল্লি, ২৭ জুন – আগামী ১ জুলাই থেকে আমূল বদলে যাচ্ছে দেশের অপরাধ সংক্রান্ত আইন। ওই দিন থেকেই বাতিল হয়ে যাবে ব্রিটিশ সরকারের তৈরি ফৌজদারি আইন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীরা আগেই আপত্তি তুলেছিল। ভারত সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ২৭ জুন, বৃহস্পতিবার সংসদের উভয় সভার যৌথ অধিবেশনের ভাষণে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ঘোষণা করেন, ১ জুলাই থেকে

দিল্লি, ২৭ জুন – আগামী ১ জুলাই থেকে আমূল বদলে যাচ্ছে দেশের অপরাধ সংক্রান্ত আইন। ওই দিন থেকেই বাতিল হয়ে যাবে ব্রিটিশ সরকারের তৈরি ফৌজদারি আইন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীরা আগেই আপত্তি তুলেছিল। ভারত সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ২৭ জুন, বৃহস্পতিবার সংসদের উভয় সভার যৌথ অধিবেশনের ভাষণে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ঘোষণা করেন, ১ জুলাই থেকে ন্যায় সংহিতা চালু হবে। তিনি বলেন, ‘১ জুলাই থেকে ন্যায় সংহিতা চালু হবে। ব্রিটিশ আমলে গোলামি ব্যবস্থায় শাস্তির বিধান ছিল। সেই আইন বদলের সাহস দেখিয়েছে সরকার। এবার শাস্তির বদলে ন্যায়ের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। সিএএ-র অধীনে নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

২০২৩ এর ২৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন আইনে সম্মতি দেন। তার আগে কার্যত বিরোধী শূন্য সংসদে তিনটি বিল পাশ করিয়ে নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি পরে ঘোষণা করেন, ১ জুলাই থেকে নতুন আইন কার্যকর হবে। যদিও নতুন আইন নিয়ে বিচারক-পুলিশ-আইনজীবীদের বেশিরভাগ এখনও অন্ধকারে। অনেকের কাছেই নতুন আইন এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে ১ জুলাই থানায় অভিযোগ দায়ের করার সময় আইনের ধারার প্রয়োগ নিয়েও সমস্যায় পড়তে হবে পুলিশকে। একই কারণে বিচার চলাকালীন  সমস্যার মুখে পড়বেন বিচারকেরাও। সবচেয়ে সমস্যায় পড়বেন থানায় কর্মরত পুলিশ কর্মী ও আধিকারিকরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, পুলিশ-আইনজীবী ও নিম্ন আদালতের বিচারকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে পুলিশ-প্রশাসন ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য নতুন আইন নিয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ অনেকেরই ঠিকমতো মেলেনি। 
১ জুলাই থেকে ফৌজদারি বা অপরাধ সংক্রান্ত বিচার ব্যবস্থায় চালু হতে যাচ্ছে নতুন তিন আইনের শাসন। ভারতীয় দণ্ডবিধি বা আইপিসি’র বদলে ভারতীয় ন্যায়সংহিতা বা বিএনএস, ফৌজদারি কার্যবিধি বা সিআরপিসি’র বদলে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা বা বিএনএসএস এবং এভিডেন্স অ্যাক্টের বদলে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম বা বিএসএ গোটা দেশে চালু হবে । 
আইন-আদালত ও মানবাধিকার রক্ষার কাজে যুক্ত মহলের মতে, স্বাধীনতার পর কম করে ৭৫ বার আইপিসি সংশোধন করা হয়েছে। এই প্রথম গোটা আইন বদলে ফেলা হল। নয়া আইন প্রনয়ণের সময় সরকারের তরফে বারে বারে দাবি করা হয় ব্রিটিশ সরকারের দমনপীড়নমূলক ধারাগুলি বাতিল করার। যদিও নতুন  আইনের ধারা-উপধারা দেখে অনেকেই মনে করছেন,শুধুমাত্র নামের  বদল ঘটিয়ে ব্রিটিশ আইনই  বলবৎ রাখা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আইনের ধারা আরও কঠোর করা হয়েছে। 

মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এই নতুন আইনের কঠোর ধারাগুলির বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে প্রচার শুরু করেছে। তারা নাগরিকদের প্রতিবাদ করার ডাক দিয়েছে। পাশাপাশি একাধিক মানবাধিকার সংগঠন এই নতুন আইনকে বিপজ্জনক বলে বাতিলের দাবি তুলেছে। তাদের বক্তব্য, ব্রিটিশ আইনে গ্রেপ্তারের পর আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ ১৪ দিন হেফাজতে রাখতে পারে পুলিশ। নতুন আইনে বলা হয়েছে ৬০ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তকে হেফাজতে রাখতে পারবে। অনেকেই মনে করছেন, এটা মানবাধিকার কেড়ে নেওয়ার বড় নজির। 

তুন আইনে ৩৩টি অপরাধের ক্ষেত্রে জরিমানা ও কারাবাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ৬ মাসের সাজা বেড়ে হয়েছে ১ বা ২ বছর। ২ বছরের কারাবাসের মেয়াদ বৃদ্ধি করে করা হয়েছে ৩ বা ৫ বছর। বহু অপরাধে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর আমৃত্যু কারাবাসের বিধান বলবৎ হয়েছে নতুন আইনে। ১৪ বছর মুক্তির আবেদন বিবেচনার সুযোগ ওই সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া ইউএপিএ-সহ দেশদ্রোহিতার অভিযোগের বিচারের কঠোর ধারাগুলি আগের মতোই বহাল রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘তিন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এখনই কার্যকর করবেন না’, এই মর্মে কয়েক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, নৈতিকভাবে কেন্দ্রে এই আইন এখনই কার্যকর করা উচিত নয়।  কিন্তু সেই আপত্তি উড়িয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। ১ জুলাই থেকে ওই তিন আইন কার্যকর হবে দেশজুড়ে বলে জানানো হয়েছিল। ২৭ জুন সংসদে ভাষণেও বিষয়টিতে সিলমোহর দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।