কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলােপের সরকারি সিদ্ধান্তের আইনি বৈধতা নিয়ে করা মামলার শুনানি অক্টোবর মাস থেকে হবে। বুধবার একথা জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। একই সঙ্গে এই বিষয়ে কেন্দ্রকেও নােটিশ পাঠিয়েছে আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলােপ করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে একাধিক আবেদন জমা পড়েছিল। বুধবার সেই আবেদনের উপর শুনানি হয়। তাতে শীর্ষ আদালত জানায়, এই নিয়ে করা মামলার শুনানি অক্টোবর মাস থেকে করা হবে। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে হবে শুনানি। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়েছেন, এই নিয়ে কেন্দ্রকে নােটিস পাঠানাে হবে এবং মতামত জানাতে বলা হয়েছে। কেন এই মামলা?
গত ৫ অক্টোবর কাশ্মীর নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় মােদি সরকার। ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ (এ) ধারা বিলােপ করার কথা ঘােষণা করা হয়। সংসদের দুই কক্ষে সেই বিল পাসও হয়ে গিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘােষণা করে মােদি সরকার। সঙ্গে সঙ্গে সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালােচনায় সরব হন বিরােধীরা। পুরােটাই অগণতান্ত্রিক এবং বেআইনি দাবি করতে থাকেন তারা।
পুনরায় কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাহালের দাবিতে এবং মােদি সরকারের সিদ্ধান্তকে বেআইনি দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হন আইনজীবী সহ একাধিক রাজনৈতিক নেতা। প্রায় ১৪টি আবেদন জমা পড়েছে আদালতে। তার প্রেক্ষিতেই এই শুনানি। ইয়েচুরিকে। কাশ্মীরে যাওয়ার অনুমতি ও বুধবার ৩৭০ ধারার বিরােধিতায় করা আবেদনের মামলার শুনানির পাশাপাশি কাশ্মীর নিয়ে একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
তিনি জানিয়েছেন কোনওভাবেই দেশের কোনও নাগরিককে দেশের কোনও প্রান্তে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না। সীতারাম ইয়েচুরির করা আবেদনের ভিত্তিতেই এই নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এতদিন কোনও রাজনৈতিক নেতাকেই কাশ্মীরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। গুলাম নবি আজাদ থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে বিরােধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের কাশ্মীরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকেই তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একই ঘটনা ঘটে সিপিএম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গেও। তারপরেই শীর্ষ আদালতে মামলা ঠোকেন ইয়েচুরি।
বুধবার, শুনানি চলাকালীন বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এবং একজন কাশ্মীরী শিক্ষার্থী, যিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান, দুজনকেই জম্মু ও কাশ্মীর সফরের অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ‘আমরা বিষয়টি পাঁচ বিচারকের সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে প্রেরণ করেছি’, বুধবার জানায় বিচারপতি এসএ নাজিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। ‘আন্তঃসীমান্ত প্রতিক্রিয়া হবে’ কেন্দ্রের দেওয়ার এই যুক্তিও খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।
তবে সরকার পক্ষের শীর্ষ আইনজীবী বলেছেন যে, আদালত যা যা বলছে তা রাষ্ট্রসংঘের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। যেহেতু উভয়পক্ষ থেকেই এ নিয়ে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাই বেঞ্চ বলেছে, আমরা কী করব তা জানি, আমরা এই নির্দেশ দিচ্ছি, আমরা এতে কোনও পরিবর্তন আনব না।’
৫ আগস্ট সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘােষণার পর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীর কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে। এ নিয়ে যে কোনও ধরনের প্রতিক্রিয়া এড়াতে ফোন এবং ইন্টারনেট সংযােগ বন্ধ করা হয় এবং বিশাল সমাবেশ করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞ জারি করা হয়। এলাকায় ৫০,০০০ এর বেশি অতিরিক্ত সেনা মােতায়েন করা হয়। সূত্র মারফত খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতি সহ ৪০ জন মুলধারার রাজনৈতিক নেতাকেও আটক করে রাখা হয়েছে।