এসএসসির ২৬ হাজার চাকরির ভবিষ্যৎ জানা যাবে তিন সপ্তাহ পরে

দিল্লি, ১৬ জুলাই – এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়  ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বহাল থাকবে,  না কি বাতিল হয়ে যাবে সে বিষয়ে মঙ্গলবারও সুপ্রিম কোর্টে  সিদ্ধান্ত হল না। মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ আদালতে মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সবপক্ষের বক্তব্য শুনবেন বলে জানিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন অনিশ্চয়তায় থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু এদিনও  এসএসসি   মামলার শুনানি ৩ সপ্তাহ পিছিয়ে যায় । সুপ্রিম কোর্ট এদিন জানিয়েছে, এই মামলায় পাঁচ পক্ষের বক্তব্যই  আদালত শুনবে। এই পাঁচ পক্ষ হল  রাজ্য, এসএসসি, মূল মামলাকারী, চাকরিহারা এবং সিবিআই। ২ সপ্তাহ পর সব পক্ষকে ফের পালটা হলফনামা জমা দিতে হবে। এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে মঙ্গলবার থেকে তিন সপ্তাহ পরে, অর্থাৎ অগস্টের শুরুতে।

 
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে মঙ্গলবার সকালে মামলাটি ওঠে । প্রধান বিচারপতিই  লোকসভা ভোটের আগে ওই মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ে , মঙ্গলবার আবার মামলাটি তাঁর এজলাসে শুনানির জন্য উঠলে প্রধান বিচারপতি জানান, তাঁর বেঞ্চ আগে চাকরি বাতিল মামলার সঙ্গে যুক্ত পাঁচ পক্ষের বক্তব্য শুনবে, তার পরে এই  ব্যাপারে পরবর্তী নির্দেশ দেবে।

২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরির  নিয়োগ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ, বেআইনিভাবে অতিরিক্ত পদ তৈরি করে ২৫ হাজার ৭৬৩ জনকে চাকরি দেওয়া হয়। এই চাকরির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হওয়া মামলার রায়ে চাকরি বাতিল করে দেওয়া হয়। এমনকী এই চাকরিজীবীদের বেতন ফেরত দিতে হবে এমন নির্দেশও দেওয়া হয়। আবেদনকারীরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গেলে তাতে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত । 
 
মঙ্গলবার এসএসসি মামলার শুনানি শুরু হওয়ার পরেই রাজ্য সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, তারা এ সংক্রান্ত একটি হলফনামা জমা দিতে চায় আদালতে। এর পরে এসএসসিও সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, তারা হলফনামা জমা দিতে ইচ্ছুক। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার জন্য নোডাল কাউন্সিলর নিয়োগ করার কথা বলে সুপ্রিম কোর্ট। পরে আদালত জানায় ওই মামলার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত পক্ষেরই বক্তব্য শুনবে তারা। ওই মূল পাঁচ পক্ষ ছাড়া অন্য কেউ যদি তাঁর বক্তব্য জানাতে চান, তবে লিখিত ভাবে পাঁচ পাতার মধ্যে সেই বক্তব্য জানাতে হবে, কিন্তু কোনও পক্ষই নিজেদের বক্তব্য জানানোর জন্য দু’সপ্তাহের বেশি সময় পাবে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয় দু’সপ্তাহ পরে কারও বক্তব্য শোনা হবে না।
মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য শোনার জন্য আলাদা আলাদা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।  তার মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকার, এসএসসি,  আবেদনকারী যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, সিবিআইয়ের  বক্তব্য , যাঁদের নথি যাচাই হয়নি তাঁদেরও বক্তব্য শোনা হবে। এই সব পক্ষের বক্তব্য জানানোর জন্য সর্বোচ্চ আদালতের তরফে ‘নোডাল অ্যাডভোকেট’ ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই দুসপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য নথিভুক্ত করে সর্বোচ্চ আদালতে পেশ করবে । শীর্ষ আদালত সূত্রে খবর, এই পাঁচ পক্ষ ছাড়া অন্য কোনও পক্ষ বক্তব্য জানাতে চাইলে, লিখিতভাবে সুপ্রিম কোর্টে তা জানাতে পারবে। তবে তা পাঁচ পাতার মধ্যেই রাখতে হবে।
 
 

সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশে স্বাভাবিকভাবেই খুশি হয়েছিলেন চাকরিহারারা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য ছিল, ‘কিছু অযোগ্যদের জন্য কেন বাকি যোগ্যদের ভুগতে হবে?’ ১৬ জুলাইয়ের দিকে তাকিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু, এই মামলা পিছিয়ে যাওয়ার পর এই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ জানালেন, ‘আমাদের বিচারব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’ প্রসঙ্গত, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, এই চাকরিহারাদের পাশে রয়েছে রাজ্য। প্রয়োজনে যতদূর আইনি লড়াই করা যায়, তা করা হবে।

সেই মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের দরজায় কড়া নেড়েছিল রাজ্য। অন্যদিকে, বিজেপির তরফেও একটি বিশেষ সেল খোলা হয় ‘যোগ্য’-দের আইনি সাহায্য়ের যেখানে  কথা বলা হয়েছিল। এখন এই চাকরি বাতিল মামলায় কী রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট সেই দিকেই সবার নজর থাকবে ।