মহুয়া মৈত্রকে তলব ইডির, কোনও সমন পাননি বলে দাবি প্রাক্তন সাংসদের

কলকাতা, ১৫ ফেব্রুয়ারি –  বিদেশী মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করার একটি মামলায় লোকসভার প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে তলব করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আগামী সোমবার ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সমন পাঠানো হয়েছে তাঁকে। যদিও মহুয়া জানিয়েছেন, তিনি কোনও সমন পাননি। মহুয়ার দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওই ধরনের কোনও অভিযোগ আনা যেতে পারে না। সেই মর্মে তিনি ইডিকে আইনজীবীর চিঠিও পাঠাচ্ছেন। ইডি সূত্রে আরও খবর, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সংস্থার দফতরে মহুয়াকে জবানবন্দি দিতে বলা হয়েছে। তাঁর সেই জবানবন্দি ফেমা আইনের অধীনেই রেকর্ড করা হবে বলে জানান ইডি কর্তারা।  
 
মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সিবিআইও আলাদা তদন্ত করছে। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার অভিযোগ এনেছিলেন।  

গত ডিসেম্বরে লোকসভার সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় মহুয়াকে। ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’কাণ্ডে মহুয়াকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করেছিল লোকসভার এথিক্স কমিটি। ৪৯৫ পৃষ্ঠার রিপোর্ট পড়ে দেখার জন্য সময় চেয়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলির তরফেও স্পিকারের কাছে সময় চাওয়া হয়। কিন্তু স্পিকার সময় দেননি। বহিষ্কারের পর মহুয়া জানিয়েছিলেন, এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন তিনি। আগামী ৩০ বছর লোকসভার ভিতরে এবং বাইরে লড়াই করবেন। এই বহিষ্কারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে এখনও মামলাটি বিচারাধীন।

সূত্রের খবর, এথিক্স কমিটির রিপোর্টে তৃণমূলের সাংসদ লোকসভার লগইন আইডি অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার বিষয়টিকে ‘অনৈতিক আচরণ’ এবং ‘সংসদের অবমাননা’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এথিক্স কমিটি রিপোর্টে মহুয়াকে কড়া শাস্তি দেওয়ার সুপারিশও করা হয়। একই সঙ্গে রিপোর্টে আরও সুপারিশ করা হয় যে, মহুয়ার সাংসদপদ যেন খারিজ করা হয়। এ ছাড়াও রিপোর্টে মহুয়ার বিরুদ্ধে সরকারি তদন্তের কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়াও এথিক্স কমিটির রিপোর্টে মহুয়া এবং দর্শন হীরানন্দানির মধ্যে নগদ অর্থ লেনদেনের  তদন্ত করানোর সুপারিশ করা হয়।

মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ব্যবসায়ী দর্শনের কাছ থেকে উপহার ও টাকা নিয়ে সংসদে শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই প্রশ্নে তিনি আদানির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও। সাংসদের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ডও দর্শনকে মহুয়া দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের। একই অভিযোগ করেছিলেন মহুয়ার প্রাক্তন বন্ধু আইনজীবী জয় দেহাদ্রাই। মহুয়া জানান, বন্ধু দর্শনকে তিনি আইডি, পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন শুধুমাত্র তাঁর প্রশ্নগুলি ‘টাইপ’ করে দেওয়ার জন্য। কৃষ্ণনগরের বহিষ্কৃত সাংসদের এ-ও দাবি, ওই সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম বা বিধি নেই।


 ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেতা দেবকে তলব করেছে ইডি। আগামী বুধবার দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। ঘনিষ্ঠমহলে দেব জানিয়েছেন, তিনি হাজিরা দেবেন। তবে মহুয়া যাবেন কি না, তা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।