• facebook
  • twitter
Thursday, 19 December, 2024

যোগ্য – অযোগ্য চাকরিপ্রার্থী বাছাই করা না গেলে বাতিল পুরো প্যানেল, জানাল শীর্ষ আদালত 

রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে মামলায় এবার সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে সবথেকে গুরুত্ব দেওয়া হয় যোগ্য ও অযোগ্যকে আলাদা করা সম্ভব কি না তার উপর।এদিনের শুনানিতে এসএসসির ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেলটিকে নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য ,' ডাল মে কুছ কালা হ্যায়, ইয়া সব কুছ কালা হ্যায়।' 

রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে মামলায় এবার সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে সবথেকে গুরুত্ব দেওয়া হয় যোগ্য ও অযোগ্যকে আলাদা করা সম্ভব কি না তার উপর।এদিনের শুনানিতে এসএসসির ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেলটিকে নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য ,’ ডাল মে কুছ কালা হ্যায়, ইয়া সব কুছ কালা হ্যায়।’  অর্থাৎ শুধু অসঙ্গতির অংশটুকুই নয়, গোটা তালিকা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। অর্থাৎ স্কুল সার্ভিস কমিশন, এসএসসি-র ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তবে যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা না-গেলে পুরো প্যানেল বাতিল করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা না গেলে পুরো প্যানেল বাতিল করতে হবে।’ এই মামলার পরবর্তী শুনানি জানুয়ারি মাসে।
 
ওএমআর শিটে রদলবদল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর প্রশ্ন, এসএসসি এখন বলছে যোগ্য-অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব। কিন্তু হাই কোর্ট কেন বলল তাঁদের আলাদা করা সম্ভব নয়? কোন কোন ওএমআর শিটের তথ্য ক্যাপচার করে রাখা হয়েছে, তা স্কুল সার্ভিস কমিশনকে দুপুর ২ টোর মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের তৈরি সুপারনিউমেরারি পদ নিয়েও। প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিবিআই তদন্তও। 
 
সুপ্রিম কোর্টে ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিলের মামলার শুনানির শুরুতেই সুপারনিউমেরারি পোস্ট নিয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারকে। কেন এই পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল তা জানতে চায় আদালত। একই সঙ্গে যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বাছাই করতে রাজ্যের সম্মতি রয়েছে কিনা তারও জবাব চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। 
 
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাসে মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরু থেকেই প্রশ্নের মুখে পড়ে এসএসসি ও রাজ্য সরকার। অভিযোগ, সুপারনিউমেরারি পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল অযোগ্যদের চাকরি বহাল রাখার জন্য। এর পর প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘অযোগ্যদের খুঁজে বার না-করে সুপারনিউমেরারি পোস্ট তৈরি করলেন। ওই সময় কেন এটা করলেন? আপনারা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন অযোগ্যদের বাদ দেওয়া হবে না।’ 
 
রাজ্যের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী। রাজ্যের আইনজীবী জানান, তাঁরা কাউকে নিয়োগ করেননি, কলকাতা হাইকোর্টের সম্মতি ছাড়া নিয়োগ সম্ভব নয়।প্রসঙ্গত, এসএসসিতে নিয়োগ করতে অনেক অতিরিক্ত পদ তথা সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। রাজ্য সরকারই সেই অনুমোদন দিয়েছিল। অভিযোগ, ওই সমস্ত শূন্যপদে অযোগ্যদের নিয়োগ করা হয়েছিল।
 
ফাঁকা ওএমআর শিট নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সাদা ওএমআর শিটও পাওয়া গিয়েছে। তাহলে কি ওএমআর শিটও বদলানো হয়েছে?  প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ওএমআর শিট কি নষ্ট করা হয়েছিল ? নষ্ট করলেও তা কত দিনের মধ্যে? রাজ্যের উত্তর, এক বছর পরে ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়। তবে‘মিরর ইমেজ’ সংরক্ষণ করে রেখেছে এসএসসি।
 
প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘সাধারণভাবে এটা ঠিক নয়। কেউ ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করে রাখেনি। এসএসসি করেনি। তারা দায়িত্ব দিয়েছিল নাইসাকে। তারাও করেনি। নাইসা আবার স্ক্যানটেককে তথ্য দেয়। তারাও সংরক্ষণ করেনি। স্ক্যানটেক স্ক্যান করেই ছেড়ে দিয়েছিল।’ 
 
এই বাদানুবাদের মধ্যেই এসএসসিকে দায়ী করেন রাজ্যের আইনজীবী। বলেন, ‘কোনও টেন্ডার ছাড়াই নাইসাকে দায়িত্ব দিয়েছিল এসএসসি। তারা কেন এমন করল স্পষ্ট নয়।’  প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অনেক কিছু গোপন করা হয়েছে। একটা জিনিস স্পষ্ট যে  আসল এবং স্ক্যান ওএমআর শিট একই নয়।’ যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের বাছাই করতে মেটা ডেটা খুঁজে বার করতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। 
 
এর পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি-র আইনজীবী বলেন, ধাপে ধাপে পরীক্ষা হয়েছে। তাই সব ওএমআর সিট সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব ছিল না। ২০২১ সাল পর্যন্ত কোনও অনিয়মের অভিযোগ আসেওনি। তবে ২৬ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দেওয়ার পর কিছু নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে কার্যত স্বীকার করে নেন তিনি। এরপরই কোন কোন ওএমআর শিটের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, সেই তথ্য দুপুর ২টোর মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।  
 
শুনানির মধ্যেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী বলেন, ‘দেশে এমন কোনও রাজ্য নেই, যেখানে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সমস্যা হয়নি। তবে এটাতে উৎসাহ দিচ্ছি না।’ তার পরেই খানিক সংশয়ের সুরেই প্রধান বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, তিনি জানেন না “ডাল মে কালা হ্যায়, ইয়া সব কুছ হি কালা হ্যায়। 
 
চলতি বছর এপ্রিল মাসের ২২ তারিখ কলকাতা হাইকোর্ট এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে ২০১৬ সালের এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে প্রায় ২৬ হাজার জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যায়। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন চাকরিহারাদের একাংশও। এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। 
 
তবে ২০১৬ সালের পুরি প্যানেল বাতিলা করা হবে নাকি কেবলমাত্র অবৈধ চাকরি প্রাপকদের চাকরি বাতিল হবে সেই প্রশ্ন বিগত দিনে উঠেছিল কলকাতা হাইকোর্টেও। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টেও সেই প্রশ্ন উঠল। ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলা ফের গড়াল নতুন বছরে।