দিল্লি, ২৫ এপ্রিল – আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে কংগ্রেস-সহ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বিভিন্ন দল। এই বিষয়ে বিজেপি-র কাছে জবাব চেয়েছে নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই প্রথম পদক্ষেপ করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে রাহুলের বক্তৃতা নিয়েও কমিশনে গিয়েছিল বিজেপি। তাই পাল্টা কংগ্রেসের কাছেও জবাব চাওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ এপ্রিল, সকাল ১১টার মধ্যে দুই নেতাকে তাঁদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে বিজেপি, কংগ্রেস- দুই দলকেই নোটিস পাঠানো হয়। বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা ও কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের কাছ থেকে তাদের দলের নেতাদের ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জবাব চাওয়া হয়েছে ।
দুই পাতার বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারকা প্রচারকদের কাছ থেকে উচ্চ মানের বক্তৃতা আশা করা হয়, কিন্ত অনেক সময় নির্বাচনের উত্তাপে তাঁরাও নিম্ন স্তরে নেমে আসেন। দলগুলির প্রাথমিক দায়িত্ব তাদের প্রার্থীদের, বিশেষ করে তারকা প্রার্থীদের আচরণ স্থির করা। এক্ষেত্রে বিজেপির জেপি নাড্ডা ও কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে তাদের তারকা প্রচারকদের আচরণ ও মন্তব্যে রাশ টানতে বলা হয়েছে। এর আগে কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনাথ ও বিজেপির দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নিয়েও দলকে সতর্ক করেছিল নির্বাচন কমিশন।
উল্লেখ্য, মোদি এবং রাহুল- উভয়ের বিরুদ্ধেই ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। গত রবিবার ভোটপ্রচারের জন্য রাজস্থানের বাঁসওয়াড়ায় একটি জনসমাবেশে যোগ দেন মোদি। সেখানে গিয়ে তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন, কংগ্রেস তার ইস্তাহারে দেশের সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অতীতে বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সর্বাগ্রে অধিকার মুসলিমদের। সেই কারণেই সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। যাতে দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম এবং অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়।’’ এর পরে সোমবার উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে গিয়ে মোদি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে।’’
সম্প্রতি হায়দরাবাদে কংগ্রেস নেতা রাহুল মন্তব্য করেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কোন শ্রেণির হাতে কত সম্পদ আছে, তা সমীক্ষা করে দেখবে। সেই মন্তব্যের রেশ ধরেই বাঁসওয়াড়া এবং আলিগড়ে ওই মন্তব্য করেন মোদি । সেই মন্তব্যের নিন্দা করে সরব হয় কংগ্রেস এবং বামেরা। কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে।
অন্য দিকে, রাহুলের বিরুদ্ধে ভাষা এবং অঞ্চলের ভিত্তিতে ঘৃণা ও বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ তুলে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপিও। বিজেপির অভিযোগ, দেশের দারিদ্র বৃদ্ধি নিয়ে রাহুল যে দাবি করে চলেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। রাহুলের বিরুদ্ধে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করার অভিযোগও তোলে গেরুয়া শিবির। মল্লিকার্জুন খাড়গেও আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি।
লোকসভা ভোটের উত্তপ্ত আবহে মোদি এবং রাহুল— উভয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগই বিবেচনা করেছে কমিশন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে চিঠি পাঠিয়ে জবাব তলব করা হয়েছে। আগামী ২৯ এপ্রিল সকাল ১১টার মধ্যে সেই জবাব দিতে হবে।