দিল্লি, ১৫ মে – নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হিন্দু ও মুসলিম বিভেদমূলক মন্তব্য করছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এমনকি এই নিয়ে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করা হয়। এই অভিযোগের জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী । তাঁর কথায়, ‘যেদিন আমি হিন্দু-মুসলিম করব, সেদিন আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে অযোগ্য প্রমাণিত হব। আমার সংকল্প, আমি হিন্দু-মুসলিম করব না।’ সম্প্রতি এক টেলিভশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন মোদি। এক্স প্ল্যাটফর্মে সেই সাক্ষাৎকারের ক্লিপগুলি পোস্ট করেছিলেন মোদি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিলেন। তাঁর কথায়, আমি হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ করি না। যেদিন করব, সেদিন রাজনীতিতে থাকব না। এটাই আমার সংকল্প। তিনি দাবি করেন, তাঁর মন্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে মোদি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমার দেশের মানুষ আমাকে ভোট দেবেন। যেদিন আমি রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলিম নিয়ে কথা বলা শুরু করব, সেদিনই আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে থাকার যোগ্যতা ও ক্ষমতা হারাব। আমি হিন্দু-মুসলিম করব না। এটাই আমার সংকল্প।’ এদিকে এর আগে একাধিক নির্বাচনী ভাষণে মোদির গলায় ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং ‘যাদের বেশি সন্তান রয়েছে’র মতো কথা শোনা গেছে। তাঁর এই সব মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে মোদি বলেন, ‘আমি শুধুমাত্র মুসলিমদের সম্পর্কে কথা বলেননি। প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের কথা বলেছি। আমি স্তম্ভিত । এমন কেন হয় যে, যখনই কেউ ‘বেশি সন্তান আছে’ এমন লোকের কথা বলে, তখন অনুমান করা হয় যে তারা মুসলমান ? মুসলমানদের প্রতি এত অবিচার কেন? যেখানে দারিদ্র্য আছে, সেখানে সন্তান সংখ্যা বেশি। আমি হিন্দু বা মুসলমান কারও কথাই বলিনি। আমি বলেছি, আপনি যতগুলি বাচ্চার যত্ন নিতে পারবেন, ততগুলি সন্তান নেওয়া উচিত। এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে দেবেন না, যেখানে সরকারকে আপনাদের সন্তানদের খেয়াল রাখতে হবে।’
কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআইএমএল-সহ একাধিক দল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, একাধিক সভায় তিনি তাঁর ভাষণে হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। প্রচার সভার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখা হয়েছে। এখানে রামনবমীর পুজো করতে দেওয়া হয় না।’ কংগ্রেসের ইস্তাহারকে মুসলিম লিগের ঘোষণাপত্র বলে আখ্যা দিয়ে মোদি বলেন, শতাব্দী প্রাচীন দলটি ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। হিন্দু মহিলার মঙ্গলসূত্রও নিরাপদ নয়। বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি-দের জন্য বরাদ্দ সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়ে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, কংগ্রেসসহ বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, হিন্দু ভোটারদের খুশি করতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের টার্গেট করছে মোদি ও ভারতীয় জনতা পার্টি। একাধিকবার মোদি ‘উস্কানিমূলক’ ভাষণ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। তবে মোদির দাবি, তিনি তাঁর ভাষণের মাধ্যমে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেননি। মোদি বলেন, ”আমি ভোট ব্যাঙ্কের জন্য কাজ করি না। আমি বিশ্বাস করি সব কা সাথ, সব কা বিকাশে।”