দিল্লি, ৩ অগাস্ট – বাংলার বেশ কয়েকটি নাট্যদলের অনুদান বন্ধ করল কেন্দ্রীয় সরকার। বহু বছর ধরেই নাটকের প্রচার ও প্রসারের জন্য বিভিন্ন নাট্যদলের পরিচালক ও বাকি সদস্যদের ‘গুরু-শিষ্য পরম্পরা’ নামে অনুদান দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন কারণে এরাজ্যের বেশ কয়েকটি নাট্যদলের অনুদান বন্ধ করা হয়েছে। এর নেপথ্যে রাজনাীতির গন্ধ পাচ্ছেন নাট্য ব্যক্তিত্বরা।
ফের কি রাজনীতির শিকার বাংলার নাট্যমহল ? বাংলার সংস্কৃতি জগতে গেরুয়া শিবিরের কোপ পড়ল ? এমনই প্রশ্ন উঠছে বাংলার নাট্য জগতে। কারণ আচমকাই রাজ্যের বেশ কয়েকটি নাট্যদলের অনুদান বন্ধ করল কেন্দ্রীয় সরকার। তালিকায় রয়েছে মেঘনাদ ভট্টচার্য, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের মতো কলাকুশলীদের নাট্যদল।
নাট্যকার মেঘনাদ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ”১৮ বছর ধরে কেন্দ্রের অনুদান পাচ্ছিলাম, এবার তা বন্ধ হল। কেন্দ্রের থেকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে একেক জনকে একেকরকম কারণ দেখানো হয়েছে। কাউকে বলা হয়েছে, ‘তুমি সবল হয়ে গেছ।’ কাউকে বলছে ‘সংগঠন করছ, ভাল তুমি নিজেই পারবে।’ আমার নিজের ধারণা, কেউ একটা তালিকা বানিয়ে দিয়েছে। তার রাজনীতির সঙ্গে আমার রাজনীতি, ও মনে করছে মিলছে না। এই সব মনে করে সব বেছে বেছে, কিছু দলকে পাঠিয়েছে।”
অনুদান বন্ধ হয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের নাট্যদল ‘মুখোমুখি’রও। পৌলমী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ আমরা যে ১৫ জনের গ্রান্ট পেতাম, ১৫টা ছেলেকে কিছু দিয়ে চালাতাম। একটা কিছু প্রোভাইড করতে পারতাম। থিয়েটারের তো এমনিতেই টাকা নেই। সেটা এরা যদি হঠাৎ বন্ধ করে দেয়, আমরা তো অথৈ জলে পড়লাম। এটা অত্যন্ত অন্যায় কাজ করল।” নাট্যকার দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ”বিজেপি সরকার মনে করছে, গ্র্যান্ট বন্ধ করে তাঁরা আমাদের বিরোধী স্বর বন্ধ করবে, তাহলে তাঁরা খুব বড় ভুল করছে। ”
তবে অভিনেতা ও বিজেপি সমর্থক রুদ্রনীল ঘোষের কণ্ঠে অবশ্য অন্যসুর। তাঁর কথায়, ”যাঁরা বলছেন, বিজেপির বিরোধিতা করছে বলেই অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে, তাঁদের কথায় সূত্র ধরেই বলছি। এই কেন্দ্রই শিল্পকে বাঁচানোর জন্য, নাটকের প্রচারের জন্যই গ্রান্ট দেয়, আপনারা, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের দলকে বড় করে দেখানোর জন্য, যাঁরা গ্রান্ট দিচ্ছে, তাঁদের বিরোধিতা করছেন। তাঁকে শত্রু বলে মনে করা হচ্ছে। একদমই এই কারণ নয়। গোবরডাঙ্গার একটি দল, থিয়েটার হল নির্মানের জন্য গ্রান্ট পেয়েছিল প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা মতো। পরে দেখা গেল, সেই থিয়েটার হলে বিয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সেই কারণেই অনুদান বন্ধ হচ্ছে। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তীর মতো প্রবাদপ্রতিম নাট্যব্যক্তিত্বদের গ্রান্ট তো বন্ধ হচ্ছে না। তাঁরা তো বামপন্থী।”