বুলডোজার বিচার সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক, রায় সুপ্রিম কোর্টের  

বুলডোজার দিয়ে অপরাধীর বাড়ি ভেঙে দেওয়া সংবিধান বিরোধী, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার শীর্ষ আদালত রায় দেয়,’ কোনও ব্যক্তি অভিযুক্ত, এমনকি দোষী প্রমাণিত হলেও তাঁর সম্পত্তি ধ্বংস করার অধিকার কারও নেই। বুলডোজার বিচার সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক।’  বিচারপতি গাভাই ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এদিন রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলে, ‘কেউ কোনও অপরাধ করেছে বলে, যদি কোনও প্রশাসক খেয়ালখুশি মতো তাঁর বাড়ি ভেঙে দেয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি আইনবিরোধী কাজ করছেন। একজন প্রশাসক নিজেই বিচারক হয়ে উঠতে পারেন না। সংবিধান সেই অনুমতি তাঁকে দেয়নি।’  সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, কোনও প্রশাসক এইভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিলে তাঁকে সেই কাজে দায়বদ্ধ করতে হবে। এই স্বেচ্ছাচারিতার কোনও স্থান নেই। 

সুপ্রিম কোর্ট বুধবার আরও জানিয়েছে, কারও বাড়ি বা সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে ভাঙতে হলে তাঁকে স্পষ্টভাবে ১৫ দিনের নোটিস দিতে হবে। কেন বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা সেই নোটিসে স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে। তারপর বিষয়টি জেলাশাসককে জানানো হবে। জেলাশাসকের নিয়োগ করা নোডাল অফিসারের তত্ত্বাবধানে ভাঙার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। এ বিষয়ে সংবিধানের ১৪২ ধারা অনুযায়ী নির্দেশিকাও জারি করেছে শীর্ষ আদালত।

এই সময়সীমার মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলে পাল্টা মামলা করতে পারেন। সারা দেশেই এই নির্দেশ লাগু হবে বলে জানিয়ে দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই। সেই সঙ্গে তিনি এও জানান, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে সেই ব্যক্তি বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। নাগরিক অধিকার কোনওভাবেই লঙ্ঘন করা যাবে না। 

সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশে স্বভাবতই চাপে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সেখানে অপরাধীদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়ে এক সময়ে বাহবা পেয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। যোগী রাজ্যের এই বুলডোজার নীতি সংক্রামিত হয়েছিল মধ্যপ্রদেশেও।রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ ছিল, এই বুলডোজার নীতি আসলে বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির এক হাতিয়ার। বাছাই করে  সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়ে সংখ্যাগুরু অংশের বহিব পেতে  চেয়েছিলেন যোগী ও শিবরাজ, এমন বিতর্কও ওঠে।


কোনও ব্যক্তি অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে বুলডোজ়ার দিয়ে তাঁর বাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মামলা দায়ের হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গেলেও উপযুক্ত নিয়ম মেনেই এগোতে হবে প্রশাসনকে। পুলিশ-প্রশাসন কাউকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতে পারে না।

‘বুলডোজ়ার নীতি’ নিয়ে আগেও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় গত ১ অক্টোবর অন্তর্বতী আদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে বিচারপতি গাভাই এবং বিচারপতি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কোনও বাড়ি কিংবা দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কেন্দ্রের উদ্দেশে দুই বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, কোনও ব্যক্তি অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হলেও তাঁর বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে কেন ?  বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকা উচিত। কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা যুক্তি দেন, ‘বুলডোজার পদক্ষেপ’ তখনই করা হয়, যখন কোনও বাড়ি বা কাঠামো অবৈধ ভাবে তৈরি হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। উত্তরে বিচারপতি গাভাই জানান, তাঁরা এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়মবিধি তৈরি করে দেবেন। এর পরেই শীর্ষ আদালতের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা অবৈধ নির্মাণ রক্ষা করার কথা বলছে না। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি নিয়ম থাকা উচিত। যদিও রাস্তা কিংবা ফুটপাতের মধ্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে ওই অন্তর্বর্তী আদেশ প্রযোজ্য হবে না, এমনটাও জানায় সুপ্রিম কোর্ট।
 
বুধবার বিচারপতি গাভাই বলেন, ‘আমরা বাসস্থানের অধিকারের দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখেছি। সংবিধানের ১৯ এবং ২১তম অনুচ্ছেদেও এর উল্লেখ রয়েছে। বাসস্থানের অধিকার মৌলিক অধিকার। এই ধরনের অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।’