বাংলাদেশের তিস্তার পাড় থেকে উদ্ধার সিকিমের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর দেহ

গ্যাংটক, ১৭ জুলাই – নিখোঁজ হওয়ার ১০ দিন  পর  বাংলাদেশের তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার হল সিকিমের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর দেহ। পুলিশসূত্রে খবর, মঙ্গলবার ফুলবাড়ীর ৪ কিলোমিটার দূরে তিস্তা নদীতে আশি বছর বয়সী অত্রিরাম চন্দ্র পৌড়িয়ালের দেহ ভাসতে দেখা যায়। হাতের ঘড়ি দেখে মন্ত্রীকে শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। ময়নাতদন্তের পর রাতে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

সিকিমের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিকিম বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আর সি পৌড়িয়াল গত ৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন।  বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা পাড়ের জেলা লালমনিরহাটের আদিতমারিতে মহিষখোঁচা তিস্তার চরে মঙ্গলবার পৌড়িয়ালের মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। মৃতদেহটি স্থানীয় কারও নয় বলে পুলিশকে জানান সেখানকার বাসিন্দারা। মৃতদেহের হাতে দামি ঘড়ি, দামি পোশাক ছিল। খবর দেওয়া হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রশাসন ও পুলিশকে। কিন্তু কোনও নিখোঁজ সংবাদ পাওয়া যায়নি। এরপর তৎপর হয় পুলিশ। মরদেহ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত ব্যক্তির ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর হাতের ঘড়ি দেখে শনাক্ত করেন পৌড়িয়ালের পরিবার। তখনই জানা যায়, মৃত ব্যক্তি সিকিমের প্রাক্তন মন্ত্রী।  ময়নাতদন্তের পর রাতেই বিএসএফ-এর হাতে দেহ তুলে দেয় বিজিবি। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হল, কীভাবে দেহ বাংলাদেশে পৌঁছল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

 
পূর্ব সিকিমের পাকিয়ং জেলার ছোটা সিংথাম এলাকার বাসিন্দা  আরসি পৌড়িয়াল। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ম পর্যন্ত তিনি সিকিমের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। এরপর ভূমি ও ভূমি রাজস্ব, পর্যটন, বনমন্ত্রী হিসেবে ‘দ্য রাইসিং সান দলের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। ৬ জুলাই নিজের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। সিকিমের পাকয়ং থানায় গত ৬ জুলাই তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। এরপর তিস্তা নদীর বিভিন্ন জায়গায় তাঁর খোঁজে সন্ধান চালালেও পাওয়া যায়নি। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিককে খুঁজতে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়। 
 
গত সপ্তাহে তিস্তার জল বেড়ে যাওয়ায় মৃতদেহ বাংলাদেশে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার ও বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল।  মঙ্গলবার দেহটি ভেসে ওঠার পর বাংলাদেশের পুলিশ কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ পুলিশকে বিষয়টি জানায়। মৃতদেহ শনাক্তকরণের জন্য ভারত সরকার ও সিকিম প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়। 
 
মেখলিগঞ্জের এসডিপিও আশিস পি সুব্বা বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি দেহ উদ্ধার হয়েছে হয়েছে খবর পেয়ে আমরা শনাক্তকরণ শুরু করি। সিকিমের প্রাক্তন মন্ত্রীর নিখোঁজের খবর আগে থেকেই ছিল। আমরা তাঁর পরিবারকে ডেকে মৃতদেহ শনাক্তকরণ করে বাংলাদেশে ময়নাতদন্তের পর রাতে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’  
 
পৌড়িয়ালের দেহ শনাক্ত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু হয়। মঙ্গলবার রাতে পৌড়িয়ালের মরদেহ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে বুড়িমারি স্থলবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উভয় দেশের প্রশাসন ও বিজিবি আর বিএসএফের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পৌড়িয়ালের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পিএস তামাং। তামাং বলেন, ‘ আরসি পৌড়িয়ালের মতো একজন রাজনীতিবিদের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ সিকিমে জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। একাধিক পদে কাজ করে নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন।’‌

অন্যদিকে কয়েকদিন  আগেই বাংলার এক হোটেল থেকে বাংলাদেশের সাংসদের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেই  তদন্তে নেমে খুনের তথ্য সামনে আসে। তারপর নানা চাঞ্চল্যকর খবর সামনে আসতে থাকে। এবার সিকিমের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী আরসি পৌড়িয়ালের দেহ তিস্তায় ভেসে ওঠার জেরে নেপথ্যে অন্য কিছু আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা শুরু হয়েছে। এমন একজন রাজনীতিবিদের কিভাবে  মৃত্যু হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।