• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

জোট ফের চাঙ্গা

এতদিন মনে হচ্ছিল বিজেপি বিরোধী ২৮ দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’ একটি ছন্নছাড়া জোট— অনেকের মধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল৷ একটা সময় মনে হচ্ছিল এই জোটের অস্তিত্ব হারিয়ে না যায়৷ এর আগের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা সংঘবদ্ধভাবে দাঁড়াতে পারেনি নিজেদের মতানৈক্যের জন্য৷ যা বিজেপিকে দ্বিতীয়বারের জন্য দিল্লির মসনদ দখল করতে সুবিধে করে দিয়েছিল৷ এবারও আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে

এতদিন মনে হচ্ছিল বিজেপি বিরোধী ২৮ দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’ একটি ছন্নছাড়া জোট— অনেকের মধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল৷ একটা সময় মনে হচ্ছিল এই জোটের অস্তিত্ব হারিয়ে না যায়৷ এর আগের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা সংঘবদ্ধভাবে দাঁড়াতে পারেনি নিজেদের মতানৈক্যের জন্য৷ যা বিজেপিকে দ্বিতীয়বারের জন্য দিল্লির মসনদ দখল করতে সুবিধে করে দিয়েছিল৷ এবারও আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে ওই বিরোধী জোট ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যে মোটামুটি বোঝাপড়া করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল৷
কিন্ত্ত নিজেদের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝির কারণে এবারও জোট এতদিন নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল৷ কিন্ত্ত দিল্লির ‘আপ’ মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের আবগারি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর বিরোধী দলের রাজনীতিবিদরা আবার আশার আলো দেখছেন জোটের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার হবে৷ কেজরিওয়ারে গ্রেফতার শাসক বিজেপিকেও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে৷ এতদিন কেন্দ্রীয় বিজেপির নেতারা ভেবেছিলেন এবারও তাদের বিরুদ্ধে জোট সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না এবং দল তৃতীয়বারের মতো দিল্লি মসনদে বসবে এবং নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন৷

কিন্ত্ত সেটা বোধহয় সহজ হচ্ছে না, কারণ কেজরিওয়াল, যিনি জোটের অন্যতম নেতা, গ্রেফতার হওয়ার পর ছন্নছাড়া জোট শিবিরকে আবার চাঙ্গা করে তুলছে৷ বিরোধী নেতারা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতার তীব্র ভাষায় সমালোচনা করে বলেছে মোদি সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে৷ কেজরির গ্রেফতারের পর বিরোধী নেতারকা নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা দল বেঁধে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে স্মারকলিপি পেশ করবেন৷ এরপরেই কেজরির গ্রেফতারের পর জরুরি আলোচনার জন্য দিল্লি এসে পৌঁছান বিজেপি বিরোধী নেতারা৷ তাঁরা কেজরির গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করবেন৷ বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, ভোটের আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিগুলিকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের কোণঠাসা করতে চাইছে মোদি সরকার৷

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এম কে স্টালিন এবং অন্য নেতারা সমবেতভাবে এই গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাচ্ছে৷ মমতা কেজরির স্ত্রীকে প্রেরিত এক বার্তায় কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের নিন্দা করে তাঁকে অভয় দিয়ে বলেন, বিরোধীরা সবাই মিলিতভাবে তাঁদের পাশে আছে৷ রাজনৈতিক শিবিরের মতে কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের ঘটনাই কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস বামেদের এক মঞ্চে নিয়ে এসেছে৷ এখন জোড়দার আন্দোলন করা ছাড়া বিকল্প কোনও রাস্তা খোলা নেই বিরোধদের সামনে৷ এই যে তিনটি রাজনৈতিক দল এক মঞ্চে চলে এল কেজরির গ্রেফতারের পর, তার আগে তাঁদের এক মঞ্চে আসা একেবারে অসম্ভব ছিল৷ সম্প্রতি রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো ন্যায় আান্দোলনের সমাপ্তি দিবসে মুম্বইতে এই তিন দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ কমবেশি কিছু বিজেপি বিরোধী নেতা উপস্থিত থাকলেও, আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিল বামেরা এবং তৃণমূল৷ কেজরির গ্রেফতারের পর অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে এবং বিরোধী নেতারা এক হয়ে কেজরির গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানায়৷ সুতরাং জোট এখন চেষ্টা করছে কীভাবে আরও শক্তিশালী হওয়া যায়৷ বিজেপিকে দিল্লি ছাড়া করতে হলে বিরোধীদের এক হতেই হবে এবং ভোটের ময়দানে লড়াই চালাতে হবে৷

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বার্তায় কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়ালের সঙ্গে কথা বলেন৷ তাঁকে সমবেদনা জানান এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, জোটের সব নেতা এখন এক হয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে এই গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাবেন৷ তাঁরা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করবেন৷ গোটা ঘটনাকে গণতন্ত্রের ওপর বড় আঘাত বলে বর্ণনা করেন মমতা৷ তিনি সুনীতা কেজরিওয়ালকে বলেন, তাঁরা সবাই তাঁর পাশে রয়েছেন৷ সম্প্রতি বিরোধী দলের নেতারা মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের সঙ্গে দেখা করেন এবং বলেন, ভোটের আচরণবিধি চালু হওয়ারপর কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা শুধু অনৈতিক নয়, গণতন্ত্রকে আঘাত করা৷ বিরোধী নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানানোর পর অবিষেক মনু সিংভি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তাঁদের টিমে সব দলের প্রতিনিধিরাই ছিলেন৷ সবাই তাঁদের বক্তব্য মুখ্য নির্বাচনী কমিশনের কাছে পেশ করবে৷

কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের প্রতিবাদে উত্তাল দিল্লির অনেক অঞ্চল৷ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হয়৷ বিজেপির নেতারা এখন গভীর চিন্তায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারের পর অবস্থা কোন দিকে গড়ায়৷ কারণ এতদিন তাঁরা ভেবেছিলেন বিরোধী দলের জোট তাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না৷ কিন্ত্ত কেজরির গ্রেফতার তাঁদেরও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে৷ কী করে তা সামাল দেওয়া যায়, এখন সেই চিন্তায় তাঁরা মগ্ন! একটি সূত্র বলছে, খুব শিগগিরই ২৮ দলের নেতারা মিলিত হবেন এবং সিদ্ধান্ত নেবেন কী করে ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে আরও চাঙ্গা করে তোলা যায়৷ তবেই বিজেপির সঙ্গে লড়াই জমবে ভাল৷

মুখ্য নির্বাচনী অফিসার বিরোধীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে বলেছন, তিনি প্রকৃত অবস্থাটা বুঝতে পারছেন৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারের পর আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেস কাছাকাছি চলে এল৷ এক সময় গান্ধি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেজরিওয়ালের সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছিল৷ এখন সে তিক্ততা আর রইল না৷