ওমর আব্দুল্লা সরকারকে নড়বড়ে করতেই জম্মু-কাশ্মীরে ফের সন্ত্রাসবাদী হামলা, দাবি ফারুক আব্দুল্লার

ছবি: আইএএনএস

রবিবার শ্রীনগরের লালচকে গ্রেনেড হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লা। তিনি বিষয়টিকে যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এব্যাপারে তিনি এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে লিখেছেন,’সাধারণ মানুষের উপর বারবার এই হামলা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’

এদিকে বিষয়টিকে একটি ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা বলে ইঙ্গিত করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী ফারুক আব্দুল্লা। এজন্য তিনি নাম না করে রাজ্যের বিরোধীদের টার্গেট করেছেন। তাঁর দাবি, জম্মু-কাশ্মীরে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে অস্থিতিশীল করতেই এই হামলা চালানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত রবিবার শ্রীনগরের কড়া নিরাপত্তাযুক্ত পর্যটন কেন্দ্রের অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সামনে ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনায় নারী পুরুষ সহ কমপক্ষে ১২জন আহত হয়েছেন। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদীরা অল ইন্ডিয়া রেডিও-র (এআইআর) স্থানীয় স্টেশনের কাছে একটি ফ্লাইওভার থেকে গ্রেনেডটি রাস্তার ওপারে ছুঁড়ে ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। এভাবে কয়েক বছর ধরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকার পর, রাজধানী শহর শ্রীনগরে আবার অশান্তির কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। ফের সন্ত্রাসের সাক্ষী থাকল উপত্যকা। যার ফলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্কের পরিবেশ ফিরে এসেছে।


যদিও আহতদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর একটি যৌথ দল এলাকাটি ঘিরে ফেলে। বিস্ফোরণের পর মেডিক্যাল টিম সহ নিরাপত্তা বাহিনী অবিলম্বে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। আহতদের শ্রীনগরের শ্রী মহারাজা হরি সিং (এসএমএইচএস) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদীরা হয়তো নিকটবর্তী সিআরপিএফ পিকেটকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গ্রেনেডটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে জনাকীর্ণ বাজারে পড়ে যায়। যার ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন। আর এই বিষয়টিকে নিয়েই উপত্যকায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে, ওমর আব্দুল্লা সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে।

উল্লেখ্য, শনিবার শ্রীনগরের খানইয়ার শহরের কেন্দ্রস্থলে লস্কর-ই-তৈবার (এলইটি) পাকিস্তানি শীর্ষ কমান্ডার উসমান লস্করিকে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করে হত্যা করার একদিন পর এই গ্রেনেড হামলা হয়। যা বেশ কয়েকমাস পর এই প্রথম গ্রেনেড হামলা বলে জানা গিয়েছে।

এদিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ডঃ ফারুক আবদুল্লাহ শনিবার ফের সন্ত্রাসবাদী হামলার সূত্রপাতের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন যে, জম্মু ও কাশ্মীরে ওমর আবদুল্লার সরকারকে নড়বড়ে করে দেওয়ার লক্ষ্যেই পরিকল্পিতভাবে এই সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো হয়েছে। এবিষয়ে তিনি নাম না করলেও বিষয়টি রাজনৈতিক মহল মনে করে, ফারুক আব্দুল্লা আসলে বিরোধী দল বিজেপি-র দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

অন্যদিকে রবিবার গ্রেনেড হামলার বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন ‘গত কয়েকদিন ধরে উপত্যকার কিছু অংশে হামলা ও এনকাউন্টারের ঘটনা সংবাদ শিরোনামে এসেছে। যা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। শ্রীনগরের “সানডে মার্কেট”-এ নির্দোষ ক্রেতাদের উপর গ্রেনেড হামলার আজকের খবরটিও গভীরভাবে উদ্বেগজনক। নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার কোনও যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আক্রমণের অবসান ঘটাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। যাতে মানুষ কোনও ভয় ছাড়াই তাঁরা নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারেন।’

পাশাপাশি, পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতিও এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই ধরনের সন্ত্রাসমূলক ঘটনা নিন্দনীয় এবং ভয় ও ঘৃণার চক্রকে উস্কানি দেওয়ার কাজ করে।’

জম্মু ও কাশ্মীরের প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (জে কে পি সি সি) প্রধান তারিক হামিদ কররাও এই গ্রেনেড বিস্ফোরণের নিন্দা করেছেন। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করে বলেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশকে অবশ্যই এই ধরনের নৃশংস ও অমানবিক হামলা রোধে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। যাতে জনগণ নির্ভয়ে চলাচল করতে পারেন।’

এদিকে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্সের সভাপতি এবং বিধায়ক সাজাদ লোন। তিনি বলেছেন, ‘এই হিংসার ঘটনার পিছনে একমাত্র উদ্দেশ্য হল, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা এবং মানুষের ক্ষতিসাধন করা। আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কাজ করার সংকল্পকে শক্তিশালী করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় হবে এই সমস্যার সমাধান। আমরা এই ধরনের অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। সেই সঙ্গে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’