কৃষক অরাজনৈতিক সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চার ডাকে সাড়া দিয়ে হরিয়ানার আম্বালায় শুক্রবার একত্রিত হন কৃষকরা। সেখান থেকে দুপুর ১টায় দিল্লির উদ্দেশে হেঁটে মিছিল করে রওনা হন তাঁরা। কিন্তু শম্ভু সীমান্তে পৌঁছতেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। বলা হয় আর এগোতে দেওয়া যাবে না। এরপরেই কৃষকেরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করতেই পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে কৃষকদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাতে হয় পুলিশকে। এই ঘটনায় আহত হন ৬ জন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন কৃষককে আটক করে পুলিশ।
অশান্তির আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটসাঁট করা হয়েছে। আম্বালায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। পুলিশ জানিয়েছে, কৃষকদের আর এগোনোর অনুমতি নেই। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয়বার পথে নামলেন কৃষকরা। শুক্রবার ১০১ জন কৃষকের একটি দল দিল্লির উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা হন। তাঁরা আগেই জানিয়েছিলেন, সরকারের কোনও পদক্ষেপে তাঁরা ভীত নন। কিন্তু পুলিশের ব্যারিকেড উপেক্ষা করে তা ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কৃষকদের উদ্দেশ্য করে ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল। অন্যদিকে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আম্বালার কিছু অংশে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বন্ধ রয়েছে স্কুল, পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে জলকামানও। অশান্তির আশঙ্কায় আম্বালায় ও খানাউড়ি সীমান্তে ১৬৩ ধারা জারি করা হয়। ফলে একসঙ্গে পাঁচ জনের বেশি জমায়েত করতে পারবেন না। পাশাপাশি নিরাপত্তাবলয়ে মুড়ে ফেলা হয় ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নির্দেশ বহাল থাকবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। কৃষকদের এই দিল্লি অভিযানের মধ্যেই কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রীর বার্তা, সরকার আলোচনা করতে রাজি। তবে হরিয়ানা সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয় কৃষকরা অনুমতি ছাড়া দিল্লি যেতে পারবেন না। শুধু হরিয়ানা নয়, পাঞ্জাব থেকেও মিছিল যাবে দিল্লিতে। এই কর্মসূচির কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার রাত থেকে দিল্লি-পাঞ্জাব এবং দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। প্রসঙ্গত, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লি লাগোয়া পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার সীমানায় অবস্থান করছেন কৃষকদের একাংশ।
সংযুক্ত কিসান মোর্চা-র ডাকে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত-সহ একাধিক দাবিতে মিছিল করে দিল্লির সংসদ ভবনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন কৃষকরা।কৃষক নেতা সরওয়ান সিংহ পান্ধের জানিয়েছেন, এবার কৃষকেরা ট্র্যাক্টরের বদলে হেঁটে মিছিল করবেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি খানাউড়ি সীমানা থেকে কৃষকেরা মিছিল করে দিল্লির দিকে এগোতে চাইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছিল। সেই সময় শুভাকরণ সিংহ নামে এক কৃষক মারা যান।
দিন কয়েক আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ প্রতিবাদী কৃষকদের উদ্দেশে জানায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু রাস্তা অবরুদ্ধ করে মানুষের অসুবিধা করা উচিত নয়। গত সোমবার উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের একাংশ মিছিল করে সংসদে ভবনে যাওয়ার কর্মসূচি নেন। কিন্তু তাঁদের নয়ডায় আটকে দেয় পুলিশ। সেই দিনও প্রবল যানজটের কারণে অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছিল বহু মানুষকে।
ভারতীয় কিসান একতার সভাপতি লখবিন্দর সিং আউলখ জানান, কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়ার পরিবর্তে সরকার রাজ্যে একটা ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করছে। এতে সরকারের প্রতি কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে ৷ কৃষক সংগঠনের দাবি, এমএসপিতে সব ফসল কেনার নিশ্চয়তা দিতে একটি আইন করতে হবে ৷ স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ফসলের দাম নির্ধারণ করতে হবে। ডিএপি সারের ঘাটতি দূর করতে হবে। কৃষক ও খেতমজুরদের ঋণ মুকুব করতে হবে এবং পেনশন দিতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৩ ফের কার্যকর করতে হবে।
এ ছাড়াও তাদের দাবি, কৃষক আন্দোলনে নিহত কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরি দিতে হবে। বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল ২০২০ বাতিল করতে হবে ৷ নকল বীজ, কীটনাশক ও সার বিক্রয়কারী কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর আইন করতে হবে। আদিবাসীদের জমি লুটপাট করা বন্ধ করতে হবে।