কলকাতা, ৪ মার্চ: গত ১ মার্চ তৃণমূলের দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বরানগরের বিধায়ক তাপস রায়। এবার আজ, সোমবার ৪ মার্চ বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। আজ সকালেই রাজ্যের বিধানসভা ভবনে গিয়ে এই ইস্তফাপত্র জমা দেন তাপস বাবু। এখন থেকে বেরিয়েই দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি তৃণমূলকে পুরনো দল বলে উল্লেখ করলেও, তিনি নতুন করে কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করছেন, সেবিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। তিনি এবিষয়ে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
যদিও ইতিমধ্যে রটে গিয়েছে, তাপস রায় বিজেপির হয়ে লোকসভা ভোটের প্রার্থী হতে চলেছেন। তবে বিজেপি-র পক্ষ থেকে এবিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তাপস রায়ও নিজের পরিবর্তিত রাজনৈতিক অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেননি। সেজন্য এই পদত্যাগের প্রকৃত কারণ জানতে আমাদের আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। তবে বিশেষ সূত্রের খবর, আগামী বৃহস্পতিবার বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই দিন একই সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে হয়তো তাপস রায়কেও দেখা যেতে পারে বিজেপির যোগদান অনুষ্ঠানে। সেখানে বিচারপতির সঙ্গে তিনিও আনুষ্ঠানিকভাবে গেরুয়া ঝান্ডা হাতে তুলে নেবেন বলে রাজনৈতিক মহলের মত।
আজ, বিধানসভা ভবন থেকে ইস্তফাপত্র দিয়ে বেরিয়ে তাপস রায় রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। সাংবাদিককদের মুখোমুখি হয়ে তাঁর ইস্তফার কারণও ব্যাখ্যা করেন। সেই কারণগুলির মধ্যে দুটি বিষয় তুলে ধরেন। প্রথমত বাড়িতে ইডি হানার পর দলকে পাশে না পাওয়া, দলের শীর্ষ নেতাদের পরিবারের পাশে এসে না দাঁড়ানো, দ্বিতীয়ত সন্দেশখালি নিয়ে দলের প্রতি বিরূপ মনোভাব।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি তাপস রায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন। উত্তর কলকাতা লোকসভা আসনে প্রার্থী পদ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিকবার। তিনি দলে নতুন মুখ তুলে আনার পক্ষপাতী। তাঁর পাশে দাঁড়ান কুণাল ঘোষ। এই নিয়ে জল অনেকদূর গড়িয়ে যায়। কুণাল ঘোষ দলের সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্রের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার আবেদন করেন। মুখপাত্র হিসেবে তাঁর পদত্যাগের আবেদন গ্রহণ করা হলেও, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁর আবেদন এখনও গ্রহণ করা হয়নি।
বাড়িতে ইডি অভিযান নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন তাপস রায়। তিনি দাবি করেন, তাঁর বাড়িতে ইডি আসার পিছনে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত রয়েছে। উত্তর কলকাতার সাংসদকে এর পিছনে চক্রান্তের জন্য দায়ী করেন। এব্যাপারে সৌগত রায়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। প্রশ্ন তোলা হয় মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও। তিনি বলেন, শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডি-র হানা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদী হলেও, তাঁর বাড়িতে ইডি হানা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। এবিষয়ে তাপস রায় বলেন, ‘৫২ দিন আমি মুখ্যমন্ত্রীর ডাক পাইনি। আমার স্ত্রী, কন্যাও ডাক পাইনি। উনি সকলের পাশে দাঁড়িয়ে যান। আমিও আশা করেছিলাম ক্রিয়েটেড ইডি রেইডের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবেন। কিন্তু পাশে পাইনি।’
এদিকে সৌগত রায় দমদম লোকসভায় প্রার্থী হলে তাঁর হয়ে ভোট প্রচারে সহযোগিতা করেন তাপস রায়। কিন্তু সেই সৌগত রায়ও তাপসের বাড়িতে ইডি হানা নিয়েও নীরব থাকায় তীব্র মর্মাহত হন।