লখনউ, ২০ ফেব্রুয়ারি– লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে ভেঙে যাওয়ার পথে এসপি-কংগ্রেস সম্পর্ক৷ এরমধ্যেই আরেক ভাঙনের খবর উত্তরপ্রদেশ থেকে৷ অখিলেশ যাদবের দলে শোনা গেল ভাঙনের সুর৷ এসপি ছাড়লেন স্বামীপ্রসাদ মৌর্য৷ মঙ্গলবার নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশের কাছে৷ শুধু তা-ই নয়, বিধান পরিষদের সদস্য (এমএলসি) পদও ছাড়লেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ৷
তবে মঙ্গলবার হঠাৎ করে দল ছাড়ার ঘোষণা করেননি মৌর্য৷ দিন কয়েক ধরেই মৌর্যের দল ছাড়া নিয়ে গুঞ্জন চলছিল৷ অখিলেশের দলে তিনি গুরুত্ব পাচ্ছেন না বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছিলেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী৷ পাশাপাশি, অখিলেশের দল চালানোর পদ্ধতি নিয়েও তাঁর অভিযোগ ছিল বিস্তর৷ সংবাদমাধ্যম সূত্রে এ-ও খবর ছিল যে, মৌর্য নাকি নতুন দল গঠন করবেন৷ নাম এবং প্রতীকও ঠিক হয়ে গিয়েছে বলে খবর৷ ইস্তফার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মৌর্য বলেন, ‘আমি স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি৷ আমার সঙ্গে অখিলেশ যাদবের মতাদর্শগত পার্থক্য রয়েছে৷ আমি মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে কাজ করেছি৷ তিনি অন্য মানুষ ছিলেন৷ তবে তাঁর উত্তরাধিকারী তাঁর আদর্শ অনুসরণ করছেন না৷’
মৌর্যের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার ইচ্ছে ছিল বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের৷ সেই ইচ্ছেতে ‘পাত্তা’ দেননি অখিলেশ৷ সম্প্রতি অখিলেশ তাঁর দলের রাজ্যসভার প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেছেন৷ কিন্ত্ত সেই তালিকায় নাম ছিল না মৌর্যের৷ রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, সেই কারণেই ক্ষুণ্ণ হয়ে সমাজবাদী পার্টি ছাড়লেন তিনি৷
মৌর্যের নতুন দল গড়ার জল্পনার মধ্যেই আবারও তাঁর পুরনো দল বিজেপিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনাও উডি়য়ে দিচ্ছেন না অনেকেই৷ তবে তাঁকে ফের দলে নেওয়া হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিজেপির অন্দরেই৷ অতীতে দেবদেবীদের নিয়ে করা তাঁর মন্তব্য বার বার বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷
মৌর্য এর আগেই দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন৷ তার পরই তাঁর দল ছাড়ার জল্পনা শুরু হয়৷ যদিও তিনি দাবি করেছিলেন, কোনও পদ ছাড়াই তিনি সমাজবাদী পার্টিতে সাধারণ কর্মী হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবেন৷ পাশাপাশি, সমাজবাদী পার্টি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণের অভিযোগ তুলেছিলেন মৌর্য৷
ইস্তফার পর তিনি আরও জানান, ‘আমার সমর্থকেরা নতুন দল করতে চান৷ ২২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে একটি বৈঠক রয়েছে৷ সেই বৈঠকের পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে৷’’
মঙ্গলবার অখিলেশকে দেওয়া পদত্যাগপত্রে লেখেন, ‘‘আমি আপনার (অখিলেশ যাদব) সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি৷ কিন্ত্ত গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি৷ সেই কারণেই আমি দলের সাধারণ সদস্য পদ ছেডে় দিচ্ছি৷’ সেই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের বিধান পরিষদের চেয়ারম্যানকেও চিঠি লিখে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন তিনি৷
একদা মায়াবতী-ঘনিষ্ঠ স্বামীপ্রসাদ দু’দফায় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ছিলেন৷ পূর্ব উত্তরপ্রদেশের পড্রৌনা থেকে টানা তিন বার বিধানসভা ভোটে জিতেছেন তিনি৷ ২০১৭-র বিধানসভা ভোটের আগে তিনি বিএসপি ছেডে় বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ ২০১৭-র বিধানসভা ভোটে জিতে যোগী সরকারের শ্রম এবং জনকল্যাণ মন্ত্রী হন৷ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে স্বামীপ্রসাদের মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা, বদায়ুঁ কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন৷ ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপি ছেডে় অখিলেশের দলে নাম লিখিয়েছিলেন মৌর্য৷ ‘সাইকেল’ প্রতীকে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগর জেলার ফাজ়িলনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লডে় বিজেপির কাছে হেরে যান৷