আরজি করের ঘটনা রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। সেখানে এই কাণ্ডে রাজ্যকে শুধু ভর্ৎসনাতেই থেমে থাকল না সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার একাধিক বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ব্যবস্থাও গ্রহণ করল। একদিকে যেমন ডাক্তারদের কাজে ফেরার কথা বলা হল আবার তাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে গঠন করা হল টাস্কফোর্স।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে দেখা যায় রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বালকে। সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে এদিন এই শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি এদিন কড়া সুরে বলেন, প্রিন্সিপাল কী করছিলেন? এফআইআর করা হয়নি কেন! বাবা-মায়ের হাতে মৃতার দেহ তুলে দিতে এত দেরি হল কেন? পুলিশ কী করছিল, গুরুতর অপরাধ হয়েছে। হাসপাতালের মতো জায়গায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সবাই কী করছিল? কী করে হাসপাতাল ভাঙচুর করতে দুষ্কৃতীরা ঢুকল। সর্বোপরি তিনি এই ঘটনাতেও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, প্রিন্সিপাল আর জি কর থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে কী করে তাঁকে অন্য কলেজে পুনর্বহাল করা হয়!
আর জি কর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ ভাঙচুর কাণ্ডে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। ২২ অগস্ট দেশের শীর্ষ আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এই স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নিয়েছি কারণ এটি কেবল কলকাতার একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা নয়, এটি দেশের চিকিত্সকদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়। বিশেষ করে মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও তাদের কাজের সময়ের বিষয়টি রয়েছে। নারী সুরক্ষা দিতেই হবে আমাদের।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, এটা শুধু ধর্ষণের ইস্যু আছে বলেই নয়। এটা খুবই উদ্বেগজনক এবং ভুক্তভোগীর নাম সমস্ত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি দেখানো হয়েছে, এটা উদ্বেগজনক। আমাদের সিদ্ধান্ত হল, ধর্ষণের শিকার মহিলার নাম প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যাবে না। এমনকী তার ছবিও এখানে দেখানো যাবে না ।
মঙ্গলবার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় রাজ্যের কাছে জানতে চান আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়েছে কি না? এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, এই সন্দীপ ঘোষকেই টানা চারদিন জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। মঙ্গলবারও দুপুর নাগাদ সিবিআইয়ের দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন সন্দীপ।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে সিআইএসএফ। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে মঙ্গলবার আর জি কর মামলার প্রথম শুনানি হয়।
তারসঙ্গেই প্রধান বিচারপতির নির্দেশ প্রতিটি হাসপাতালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার।
আর জি কর কাণ্ডে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুনানি চলাকালীন তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। আর জি করের নিরাপত্তার দায়িত্ব সিআইএসএফকে দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সাত জনের জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘আমরা আর জি কর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করছি।’ সিআইএসএফের পুরো কথাটি হল – সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স। সিআইএসএফ এমন বাহিনী, যারা বিমানবন্দর, কয়লা খনির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। ভোটের সময়ও ব্যবহার করা হয়।
মঙ্গলবার আদালতে সিবিআইয়ের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে হাজির ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। বেঙ্গল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন সহ অন্যান্য আবেদনকারীদের আইনজীবীরাও হাজির হন। শুনানির সময়, সলিসিটর জেনারেল সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, তিনি এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে সহায়তা করবেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এই স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নিয়েছি কারণ এটি কেবল কলকাতার একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা নয়, এটি দেশের চিকিৎসক নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়। বিশেষ করে মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও তাদের কাজের সময়ের বিষয়টি রয়েছে। নারী সুরক্ষা দিতেই হবে আমাদের।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, এটা শুধু ধর্ষণের ইস্যু আছে বলেই নয়। এটা খুবই উদ্বেগজনক এবং ভুক্তভোগীর নাম সমস্ত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি দেখানো হয়েছে, এটা উদ্বেগজনক। আমাদের সিদ্ধান্ত হল, ধর্ষণের শিকার মহিলার নাম প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যাবে না। এমনকী তার ছবিও এখানে দেখানো হবে।
আর জি কর কাণ্ডে দুটি রিপোর্ট তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবারের মধ্যে সিবিআইয়ের থেকে স্ট্যাটাস রিপোর্ট তলব করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। একই সঙ্গে আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনায় রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে আদালত। ২২ অগস্টের মধ্যে এই রিপোর্ট দিতে হবে।
সপ্তাহ খানেক আগে আর জি কর হাসপাতালে এক ট্রেনি ডাক্তারকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের সেমিনার কক্ষ থেকে ওই ট্রেনি চিকিৎসককে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হত্যার আগে তাঁকে পাশবিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরার সে দোষ কবুলও করে।
প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুলিশ ঘটনার তদন্ত চালালেও দিন কয়েক আগে ধর্ষণ-খুব কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইকে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সিবিআই তদন্ত চলাকালীনই আবার আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
‘রাত দখল’ কর্মসূচি চলাকালীন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), ওষুধের স্টোররুমে ভাঙচুর চালানো হয়।