বিরোধী দলগুলিও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বন্ডে অনুদান নিয়ে বিভিন্ন সংস্থাকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বরাত পাইয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল। নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের মাধ্যমে বেনামে রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দেওয়া যেত। ব্যক্তিগতভাবে এবং কর্পোরেট সংস্থা হিসেবে, দুইভাবেই এই বন্ড কেনা যেত। বন্ড বিক্রি করত এসবিআই। সুপ্রিম কোর্ট এসবিআই-কে অবিলম্বে নির্বাচনী বন্ড বিক্রি করা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সঙ্গে, কারা কোন তারিখে বন্ড কিনেছে এবং কোন দল কত টাকার বন্ড পেয়েছে, তার সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। এসবিআই-এর থেকে পাওয়া সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে। দেখা গিয়েছিল, লোকসানে চলছে এমন বেশ কিছু অনামী সংস্থাও নির্বাচনী বন্ড কিনেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে তহবিল দিয়েছে। সেই সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল, কেন কোনও লোকসানে চলা সংস্থা, কোটি কোটি টাকার তহবিল দেবে রাজনৈতিক দলগুলিকে? তাহলে কি এগুলো কোনও ভুয়ো সংস্থা? ভুয়ো সংস্থাগুলিকে সামনে রেখে অন্য কোনও সংস্থা টাকা দিচ্ছে? য সমস্ত সংস্থাগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দিয়েছে, তাদের তহবিলের উৎস কী , তার তদন্ত চেয়েই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল।
নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সিট গঠনের আবেদন খারিজ করল সর্বোচ্চ আদালত
দিল্লি, ২ অগাস্ট – নির্বাচনী বন্ড নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশেষ তদন্তকারী দল সিট–এর তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিল দুই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আর্জি ছিল এই সিট কাজ করবে আদালতের নজরদারিতে। শুক্রবার সেই আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়।’’নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পকে ‘অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত পাশাপাশি, বন্ড কেনাবেচা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করতে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ও নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশও দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত ।
ওই রায়ে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘কুইড প্রো কুয়ো’ বলে মন্তব্য করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এর অর্থ হল, কোনও কিছুর বিনিময়ে কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘ক্ষতিকারক’ বলে আখ্যা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে দুই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানিয়েছিল, নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুবিধে পাওয়ার জন্য বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলকে টাকা দিয়েছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত বলেছে, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দেওয়া এবং নেওয়ার সময় তা ‘কুইড প্রো কুয়ো’ বা ‘ক্ষতিকারক’ ছিল কি না, তা নিয়ে এখন তদন্ত হতে পারে না।’’
জনস্বার্থ আবেদনে বলা হয়, মূলত তিন ধরনের লেনদেনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। প্রথমত, কাজের বরাত, লাইসেন্স, কাজের অনুমতি পাওয়ার জন্য অনুদান। এই সব কাজের বরাতের মূল্য অনেক ক্ষেত্রে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। দ্বিতীয়ত, ইডি, আয়কর দফতর বা সিবিআইয়ের অভিযানের ঠিক আগে বন্ডে অনুদান দিয়েছে অনেক সংস্থা। অনেক ক্ষেত্রে অনুদানের বিনিময়ে ড্রাগ কন্ট্রোলারের মতো সংস্থা যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃতীয়ত, সংস্থার পক্ষে অনুকূল নীতি তৈরির জন্য বন্ডে অনুদান দিয়েছে কয়েকটি সংস্থা।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি ‘অসাংবিধানিক’ বললেও নির্বাচনী বন্ডের পক্ষে সওয়াল করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মো্দি দাবি করেছিলেন, ভোটে কালো টাকা ব্যবহার বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই নির্বাচনী বন্ড চালু করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘যদি সৎ প্রতিফলন দেখা যায়, সকলেই এক দিন এ নিয়ে অনুশোচনা করবে।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি কখনওই বলিনি একটি সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত। কিন্তু বিরোধী দলগুলি নির্বাচনী বন্ড নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে।’’ অন্য দিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি লোকসভা ভোটের আগে বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচনী বন্ড আদৌ কোনও স্বচ্ছতার কর্মসূচি নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে বড় তোলাবাজির চক্র। নরেন্দ্র মোদি তার মাস্টারমাইন্ড।’’