মোদিকে ৬ বছরে বাঁধতে নারাজ শীর্ষ আদালত, ভোট নিষেধাজ্ঞার আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

দিল্লি, ১৪ মে – লোকসভা ভোটের প্রচারে বেরিয়ে লাগাতার ঘৃণাভাষণ দিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি – এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মের নামে ভোট চাওয়ার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে । মামলাকারীর তরফে আবেদন জানানো হয়, ধর্মের নামে ভোট চাওয়ার জন্য আগামী ৬ বছর মোদির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুক আদালত।কিন্তু এই  পদক্ষেপের আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি এসসি শর্মার বেঞ্চ মঙ্গলবার আবেদনকারীকে ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন ফতিমা নামে এক মহিলা। মোদির বিরুদ্ধে মামলাকারী অভিযোগ করেন, নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী লাগাতার হিন্দু দেবতা ও মন্দিরের নামে ভোট চাইছেন যা কোনওভাবেই কাম্য নয়। এই মামলায় পার্টি করা হয় নির্বাচন কমিশনকেও। আবেদনকারী ফতিমার আইনজীবী আনন্দ এস জোন্ধালে মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে অভিযোগ করেন, ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন লঙ্ঘন করে লোকসভা ভোটের প্রচারে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের কথা বলছেন মোদি । যা আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী। শাস্তি হিসাবে ছ’বছরের জন্য মোদীর ভোটে লড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করারও আবেদন জানান আইনজীবী জোন্ধালে।
 
তবে এদিন শুনানি চলাকালীন পত্রপাঠ এই মামলা খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের তরফে জানানো হয়, এই মামলায় আদালত কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে না। পাশাপাশি মামলাকারীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘এক্ষেত্রে আপনি কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (নির্বাচন কমিশন) কাছে আবেদন জানিয়েছেন? প্রথমে সেখানে আবেদন জানানো উচিৎ আপনার।’
দুই বিচারপতির বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, ‘‘আপনি কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন? এই আবেদন জানানোর আগে আপনাকে প্রথমে কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হবে। এর পরেই আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় বিচারপতি নাথ এবং বিচারপতি শর্মার বেঞ্চ। প্রসঙ্গত, প্রথম দফার ভোটের পরেই প্রচারে ধর্মের নামে ভোট প্রচারের অভিযোগ উঠেছে মোদির বিরুদ্ধে।
 
আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গত মাসের শেষে নির্বাচন কমিশন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে কৈফিয়ত চায়। যদিও সেই নোটিসে প্রধানমন্ত্রী নামের উল্লেখ ছিল না। এর পরেও মোদি ধারাবাহিক ভাবে, ‘মুসলিম সংরক্ষণ’, ‘দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া’র মতো মন্তব্য করেছেন।কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে আপনাদের মঙ্গলসূত্রটাও এরা তাদের হাতে তুলে দেবে যারা অধিক সন্তানের জন্ম দেয়। প্রধানমন্ত্রীর এমন  মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হয় বিরোধী শিবির। নির্বাচন কমিশনে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ দায়ের হয় । যদিও মোদির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পরিবর্তে এই ঘটনায় বিজেপিকে নোটিস পাঠায় নির্বাচন কমিশন। এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়  কংগ্রেস। 
 
এর আগেও মোদির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবিতে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন এক আইনজীবী। তাঁর মামলাও খারিজ করে দিয়েছিল আদালত।  মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, ভোট প্রচারে সাম্প্রদায়িক ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার আর্জিও রাখা হয় আদালতের কাছে। তবে আদালত জানায়, নির্বাচন কমিশন গোটা বিষয়টি দেখছে। ফলে আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।