সুপ্রিম কোর্টের ম্যারাথন প্রশ্নের মুখে রাজ্য, সিবিআইকে নতুন স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ 

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী-চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের ম্যারাথন প্রশ্নের মুখে পড়তে হল রাজ্যকে। সোমবার মামলার শুনানিতে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দেশের শীর্ষ আদালত। শীর্ষ আদালত বলে, এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করতে অন্তত ১৪ ঘন্টা দেরি করা হয়েছে। এই মামলার তদন্তে সিবিআইকে নতুন স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ওইদিনই সুপ্রিম কোর্টে ফের আরজি কর মামলার শুনানি।   

 
এদিন ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া নিয়ে শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য। দেশের প্রধান বিচারপতি কপিল সিব্বলের কাছে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের চালান দেখতে চান। ভারতের প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন যে, চালানটি কোথায় ছিল এবং তিনি ও উল্লেখ করেন যে, এটি ছাড়া ময়নাতদন্ত করা যায় না। কপিল সিব্বল জানান, এই মুহূর্তে সেটি তাঁর কাছে নেই।  কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল দাবি করেন, যে নথিপত্র সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল, তাতে চালান ছিল না। 
 
সিবিআইয়ের তরফেও জানানো হয়, ময়নাতদন্ত কখন করা হয়েছে, সেই সময়ের উল্লেখ নেই। যদিও রাজ্যের আইনজীবীর যুক্তি, সব কিছুর উল্লেখ রিপোর্টে রয়েছে ।  রাজ্যের তরফে জানানো হয়, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই বিষয়ে কোন সন্দেহের উদ্রেক হলে তাঁর কাছে রিপোর্ট চাওয়া হোক।
 
প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা কখন দায়ের করা হয়েছিল ? রাজ্যের তরফে জানানো হয়, মৃত্যুর শংসাপত্র বা ডেথ সার্টিফিকেট দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে দেওয়া হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয় দুপুর ২টো ৫৫ মিনিটে। এরপর প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, জেনারেল ডায়েরি কখন দায়ের করা হয়? রাজ্য জানায়, দুপুর ২টো ৫৫ মিনিটে। 
 
প্রধান বিচারপতি জানতে চান, আরজি কর হাসপাতালের যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, সেখানে তল্লাশি এবং তল্লাশিতে প্রাপ্ত জিনিস কখন বাজেয়াপ্ত করা হয় ? রাজ্য শীর্ষ আদালতকে জানায়, রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তল্লাশি এবং তল্লাশিতে পাওয়া জিনিস বাজেয়াপ্ত করার কাজ চলেছিল।
 
সোমবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি আরও জানতে চান , সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সিবিআইয়ের হাতে রাজ্য তুলে দিয়েছিল কী ?  প্রধান বিচারপতি বলেন,  “সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অভিযুক্তকে ঢুকতে এবং বেরোতে দেখা যায়। সেইমতো ভোর সাড়ে ৪টে থেকে ফুটেজ থাকার কথা। ওই ফুটেজ কি সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল? কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে জানান, সিসি ক্যামেরার ২৭ মিনিটের ৪টে ক্লিপিংস সিবিআইকে দিয়েছে রাজ্য।  রাজ্য জানিয়েছে, তদন্ত সংক্রান্ত যা যা তথ্য তাদের কাছে ছিল, সবই তুলে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। তবে সিবিআই এখন আরও পরীক্ষার জন্য নমুনাগুলি এইমস এবং অন্যান্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাচ্ছে। 
 
শুনানি চলাকালীন রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়, আরজি কর হাসপাতালে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, “হাসপাতালে কত বরাদ্দ হয়েছে জানতে চাই না। জানতে চাই ওই হাসপাতালে কী করা হয়েছে।”
 
রাজ্যকে এদিন কিছু নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সোমবার প্রধান বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশে বলেন, “পরবর্তী শুনানিতে কী কাজ করা হয়েছে জানাবেন । মেডিক্যাল কলেজের মাথায় ডিস্ট্রিক কালেক্টরদের নিয়োগ করুন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে আমাদের জানান।” 
 
প্রসঙ্গত, সোমবারই আরজি কর হাসপাতালে ১৪ আগস্ট ভাঙচুরের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় রাজ্য। 
 
সিবিআই-এর পক্ষে উপস্থিত হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এদিন একটি সিল করা খামে তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেয়।  সেটি পর্যালোচনা করার পর প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলে, ‘সিবিআই একটি স্টেটাস রিপোর্ট দাখিল করেছে , সেটি দেখে মনে হচ্ছে তদন্ত চলছে। আমরা সিবিআইকে নতুন স্টেটাস রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিচ্ছি। 
 
আরজি করের ঘটনার ফরেন্সিক রিপোর্ট নিয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন তোলে সিবিআই। তাদের তরফে জানানো হল, কলকাতা পুলিশের দেওয়া ওই ফরেন্সিক রিপোর্ট তারা দিল্লির এইমসে পাঠাতে চায়। পাশাপাশি, ঘটনাস্থল থেকে ফরেন্সিক নমুনা কে সংগ্রহ করেছে , তা নিয়েও প্রশ্ন  তোলে সিবিআই। তাদের দাবি , ঘটনাস্থল থেকে কে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করেছে, সেই বিষয়টিও ‘গুরুত্বপূর্ণ’। সিবিআই শীর্ষ আদালতে আরও দাবি করেছে, এই ধরনের ঘটনার পর প্রথম পাঁচ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই ঘটনার পাঁচ দিন পর সিবিআইকে তদন্ত শুরু করতে হয়েছে। সেই কারণে তাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে।  
 
আদালতে সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো , আরজি কর হাসপাতালে ৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে রাজ্য সহযোগিতা করছে না। এই অভিযোগ শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের পদস্থ আধিকারিক  এবং সিআইএসএফের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা করবেন।”
 
আরজি কর হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য নিযুক্ত সিআইএসএফ -এর তিন কোম্পানির প্রত্যেক জওয়ানের থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।  সিআইএসএফ-এর প্রয়োজনীয় সমস্ত রিকুইজিশন, সুরক্ষা ব্যবস্থা ও তৎসংক্রান্ত [পরিকাঠামো সোমবারের মধ্যেই কার্যকরী করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।