‘এক পদ, এক পেনশন’ মামলায় কেন্দ্রকে তীব্র ভৎর্‌সনা, সিদ্ধান্তের শেষ সুযোগ দিল সুপ্রিম কোর্ট

দিল্লি, ৩০ জুলাই– ‘এক পদ, এক পেনশন’ মামলায় শীর্ষ আদালতে তীব্র ভৎর্‌সনার মুখে পড়তে হল কেন্দ্রকে৷ শুধু ভৎর্‌সনাই নয়, কেন্দ্রকে শেষ সুযোগ দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ আগামী ২৫ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে৷
যদিও কেন্দ্রকে আর সুযোগ দিতে প্রথমে রাজি ছিল না সুপ্রিম কোর্ট৷ বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ ভৎর্‌সনার সুরে বলেন, “এ সব কী হচ্ছে? যদি সরকার কোনও সিদ্ধান্তই না নেয়, তা হলে আমাদের করার কিছু নেই৷ হয় আপনারা ১০ শতাংশ বর্ধিত হারে পেনশন দেওয়া শুরু করুন, না হলে আদালত সিদ্ধান্ত নিক৷ আপনারা বেছে নিন৷”
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনদের ‘এক পদ, এক পেনশন’ ব্যবস্থার অসঙ্গতিগুলি এখনও ঠিকঠাক করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র৷ সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হওয়ার কারণে কেন্দ্রকে ২ লাখ টাকা জরিমানাও করে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন ‘আর কত দিন?’ বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের নির্দেশ, সেনা কল্যাণ তহবিলে ওই জরিমানার অঙ্ক জমা করতে হবে৷ এক পদ, এক পেনশন’ ব্যবস্থায় যেখানে যেখানে অসঙ্গতি রয়েছে, তা ঠিক করার জন্য কেন্দ্রকে শেষ সুযোগ দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে গোটা ব্যবস্থা ঠিকঠাক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ অন্যথায় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনদের ১০ শতাংশ বর্ধিত হারে পেনশন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে, এমন কথাও জানিয়ে রেখেছে শীর্ষ আদালত৷
মঙ্গলবার কেন্দ্রের তরফে আদালতে সওয়াল করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাট্টি৷ তাঁর যুক্তি, সশস্ত্র বাহিনী সংক্রান্ত ট্রাইবুনালের কোচি বেঞ্চ ‘এক পদ, এক পেনশন’ ব্যবস্থায় ছ’টি ক্ষেত্রে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছিল৷ যেগুলি সংশোধন হওয়া প্রয়োজন৷ তবে সরকার এ বিষয়ে এখনও পরবর্তী পদক্ষেপ করেনি৷ সে কথা শুনেই শীর্ষ আদালতের ধমক, ‘আর কত দিন এ ভাবে চলতে থাকবে? হয় আপনারা ১০ শতাংশ বর্ধিত হারে পেনশন দিন, না হলে আদালত স্থির করে দিক৷ আমরা চেয়েছিলাম, আপনারা একটি সিদ্ধান্তে আসুন, কিন্ত্ত তা হয়নি৷ ২০২১ সালে এটি আটকে রয়েছে, কিন্ত্ত এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হল না৷’ তবে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য, সরকার হঠাৎ করে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে না৷ যে ছ’টি অসঙ্গতির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলিকে সার্বিক ভাবে খতিয়ে দেখতে হবে এবং এগুলির ফলে বাকিদের উপর কোনও প্রভাব পড়বে কি না, সেটিও দেখা দরকার৷ তিনি বলেন, ‘আদালতের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি৷ দয়া করে আমাদের আরও একটি সুযোগ দিন৷ আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব৷’
পরে অবশ্য ২ লাখ টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার শেষ সুযোগ দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ আদালতের নির্দেশ, চার সপ্তাহের মধ্যে জরিমানার অঙ্ক জমা দিতে হবে সেনা কল্যাণ তহবিলে৷ একই সঙ্গে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে ‘এক পদ, এক পেনশন’-এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট৷প্রসঙ্গত, ‘এক পদ এক পেনশন’ ব্যবস্থা ঘিরে প্রথম বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ২০১৫ সালে৷ এই ব্যবস্থায়, একই সময়ের জন্য একই পদে কাজ করে যিনি আগে অবসর নিয়েছেন এবং যিনি এখন অবসর নিচ্ছেন, উভয়েরই পেনশনের অঙ্ক সমান হবে৷ ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর নিম্ন আদালত (সশস্ত্র বাহিনী সংক্রান্ত ট্রাইবুনাল) সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল ছ’টি অসঙ্গতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য৷ কিন্ত্ত তা এখনও কার্যকর হয়নি৷ শীর্ষ আদালত এ-ও জানিয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে সময় দেওয়ার জন্য এই মামলা বারংবার পিছিয়ে গিয়েছে৷ কিন্ত্ত এ বার কড়া সিদ্ধান্ত শীর্ষ আদালতের৷