• facebook
  • twitter
Monday, 28 April, 2025

এসএসসির পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট

এসএসসির পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল দেশের শীর্ষ আদালত। 

ফাইল চিত্র

এসএসসির পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। চাকরি বাতিল নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল দেশের শীর্ষ আদালত। এর পাশাপাশি দুর্নীতিগ্রস্তদের বেতনের টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই রায়ের ফলে চাকরি হারালেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, দুর্নীতির কারণে যাঁদের চাকরি বাতিল হল, তাঁদের বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে। যাঁরা অন্য সরকারি দপ্তর ছেড়ে এখানে এসেছিলেন, তাঁরা পুরনো জায়গায় যোগ দিতে পারবেন। ৩ মাসের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

এসএসসির শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এর জেরে চাকরি যায় ২৫,৭৫৩ জনের। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গত ১০ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ আদালতে এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। তখন রায়দান স্থগিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকালে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার রায় ঘোষণা করবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। সেই মতো আজ পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত।

শীর্ষ আদালতে এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের বক্তব্য ছিল, এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়েই অনেকে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। তাই ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের এই মামলায় হাই কোর্টের রায় বহাল থাকা উচিত। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, নিয়োগে ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে। যোগ্য অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হয়নি।

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘গোটা প্রক্রিয়াটাই দুর্নীতিমূলক। যোগ্যরাও অজান্তেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। স্বচ্ছতার একমাত্র পদ্ধতি নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু করা। সেক্ষেত্রে অবশ্যই যোগ্যরা উঠে আসবেন। যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, তাঁদের টাকা ফেরত দিতে হবে না। এর ফলে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হবে। সেই সময় যাঁরা নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশ নেন, তাঁরাই নতুন পরীক্ষায় বসতে পারবেন।’

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিলের রায়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে রায় দিয়েছিল। একই সঙ্গে যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয় তাঁদের। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে পৃথক ভাবে শীর্ষ আদালতে মামলা করে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই রায়ের ফলে কতগুলো পরিবার চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। এর জন্য দায়ী তৃণমূল কংগ্রেসের লোভ, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। এর ফলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেল।’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে। যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি চলে গেল শুধু মাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। যাঁরা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের চাকরি বাঁচানোর জন্য উনি ২৬ হাজার জনের চাকরি বলিদান দিয়ে দিলেন। এই পরিবারগুলি যে আজ পথে বসল, সেজন্য দায়ী তৃণমূল কংগ্রেস ও সেই দলের নেত্রী। তৃণমূলের কিছু লোক লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দিয়েছিলেন।’ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ও রাজ্য সরকার কেন যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করতে পারেনি? সেই প্রশ্নও রেখেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। আলাদা করা হলে সকলের চাকরি যেত না বলে মনে করেন তিনি।