দেশের বিচারক ও বিচারপতিদের ‘অবাঞ্ছিত’ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ সুপ্রিম কোর্টের 

Supreme Court of India. (Photo Courtesy: Twitter)

দেশের বিচারক ও বিচারপতিদের কোনও বিষয়ে অবাঞ্ছিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং নারীবিদ্বেষী কোনওরকম মন্তব্য না করার নিৰ্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ এই মন্তব্য করার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বেঞ্চের নির্দেশ, মন্তব্য করার আগে ভেবেচিন্তে করুন। প্রসঙ্গত বেঙ্গালুরুর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাকে কর্নাটক হাইকোর্টের এক বিচারপতি ‘পাকিস্তান’ বলে মন্তব্য করায় সুপ্রিম কোর্ট একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে। বুধবার এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি হৃষিকেশ রায়কে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ একথা জানায় ।
দেশের কোনও অংশকেই ‘পাকিস্তান’ বলে চিহ্নিত করা যায় না। কর্নাটক হাই কোর্টের বিচারপতি ভি শ্রীশানন্দকে একথা বলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। বেঙ্গালুরুর মুসলিম অধ্যুষিত নির্দিষ্ট একটি এলাকাকে ‘পাকিস্তান’ বলে উল্লেখ করেছিলেন ওই বিচারপতি। পরে অবশ্য তিনি এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমাও চান। এবার তাঁকে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বললেন, ‘ আপনি দেশের কোনও অংশকেই “পাকিস্তান” বলতে পারেন না। এই ধরনের মন্তব্য দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরোধী ।’

একটি মামলার শুনানিতে কর্নাটক হাই কোর্টের বিচারপতি ভি শ্রীশানন্দ বেঙ্গালুরুর মুসলিম অধ্যুষিত এক এলাকাকে ‘পাকিস্তান’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় একটি অটোতে ১০ জন করে যাত্রী ওঠেন। যতই দক্ষ পুলিশ অফিসার নিয়োগ করা হোক না, ওই অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। ওখানে পুলিশ আধিকারিকদের মারধর করা হয়। ওটা আসলে ভারতের অংশ নয়, পাকিস্তানের মতো।”

এরপর প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ কর্নাটক হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে বিচারপতির ‘অবাঞ্ছিত’ মন্তব্যের বিষয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। গত ২০ সেপ্টেম্বর বেঞ্চের তরফে জানানো হয়, বিচারপতিদেরও মতামত প্রকাশের আগে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানা উচিত। আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বুধবার ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ”দেশের কোনও অংশকেই পাকিস্তান বলা যায় না। এটা দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতার পরিপন্থী। আদালতে কী হয়েছে তা চেপে দেওয়া যায় না।” কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতি ভি শ্রীশানন্দ সর্বোচ্চ আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় মামলাটি নিয়ে অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বেঞ্চ। তবে বিচারক ও বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।

এর আগেই সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেছে, এ ব্যাপারে আদালত একটি নির্দেশিকা তৈরি করে দিতে পারে। এর আগেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, আজকের সোশাল মিডিয়ার যুগে আদালতে কী হচ্ছে, কী বলা হচ্ছে সেসব বিষয়গুলি সকলের নজরে থাকে। তাই হাইকোর্টের বিচারপতিদের জন্যও নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা উচিত। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার মেহেতার সাহায্যও চেয়েছে শীর্ষ আদালত।