দেশজুড়ে প্রভাব ফেলল বনধ

সিল্লিতে ভারত বন্ধ সফল করতে প্ল্যাকার্ড হাতে সিআইটিইউ সদস্য। (Photo: IANS)

চোদ্দ দফা দাবিতে দশটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা ভারত বনধ মােটের ওপর সফল– দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সকাল থেকে বনধ পালিত হয়েছে, পুলিশি সক্রিয়তাও চোখে পড়ার মতাে ছিল। দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে বনধের চিত্রটা প্রায় একই রকমের ছিল— কোথাও কোথাও বনধ সমর্থকদের আটক করা হয়েছে। কলকাতার পাশ্ববর্তী এলাকা হৃদয়পুরে রেল লাইন থেকে বােমা উদ্ধার করা হয়েছে।

ভারত বনধের তেমন জোড়ালাে প্রভাব গােয়াতে লক্ষ্য করা যায়নি– সকাল থেকেই সপ্তাহের আর পাঁচটা দিনের মতাে স্বাভাবিক ছিল গােয়ার জনজীবন। ‘গােয়া কনভেনশন অফ ওয়াকার্স’ ব্যানারের শ্রমিক সংগঠনগুলাে পানাজির আজাদ ময়দানে জনসভা করেন। এআইটিইউসি সাধারণ সম্পাদক ক্রিস্টোফার ফনসেকা আজাদ ময়দানের জনসভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘কেন্দ্রের পুঁজিবাদ-পন্থীর জেরে দেশের খেটে খাওয়া শ্রমিকদের শিড়দানা ভেঙে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল নীতি সংশােধনের দাবিতে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন বনধে সামিল হয়েছে’।

মুম্বই শহরে পরিবহন ব্যবস্থার ওপর বনধের কোনও প্রভাব পড়েনি। শহরতলিতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। মেট্রো, মােনােরেল পরিষেবা, ট্যাক্সি, সরকারি বাস, অটো রিক্সা স্বাভাবিক চলাচল করেছে। প্রতিদিনের মতাে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ট্রেন একটু দেরিতে চলেছে। পুরমন্ত্রী অশােক চহ্বান বলেন, ‘শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোট প্রশাসন ভারত বনধকে সমর্থন করেছে। রাজ্য প্রশাসন কেন্দ্রীয় আইনের বিরােধিতায় শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ভারত বনধকে সমর্থন করেছে’।


দেশ জুড়ে ভারত বনধ সফল হলেও মুম্বই শহরে টেলিভিশন ও সিনেমার শুটিং-এ কোনও প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজের সভাপতি বি এন তিওয়ারি বলেন, ‘বনধের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের কর্মীরা সকলেই কাজে এসেছেন। টেলিভিশন ও সিনেমার শুটিং চলছে, কোনও সমস্যা হয়নি’

চন্ডীগড়ে অর্ডান্যান্স কেবল ফ্যাক্টরির কর্মীরা ভারত বনধ সমর্থন করেছেন। বনধ সমর্থকদের একজন বলেন, ‘কার্তুজের চাহিদা মেটানাের লক্ষ্যে ব্রিটিশরা ফ্যাক্টরিগুলাে তৈরি করেছিল। আমরা কখনােই চাইব না এই ফ্যাক্টরিগুলাে কর্পোরেট সেক্টরের হাতে তুলে দেওয়া হােক। আমাদের দাবি না মেটা পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব’।

ওড়িশায় পুলিশ বনধ সমর্থকদের সক্রিয় ৫০০ জনকে আটক করেছে। ডিসিপি অনুপ সাহু বলেন, ‘কংগ্রেস সমর্থক ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলাের কর্মীদের আটক করা হয়েছে। কোনও ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সবকটি রাস্তা খােলা রয়েছে, বনধ সমর্থকদের ভিড় নেই। বিমানবন্দর ও রেল স্টেশনগুলােতে অতিরিক্ত বাহিনী মােতায়েন করা হয়েছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাঙ্কগুলাে বন্ধ ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলােও বন্ধ থাকায় জয়েন্ট এন্ট্রান্স ২০২০ সহ সর্বভারতীয় স্তরের একাধিক পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়। ওড়িশা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি সভাপতি নিরঞ্জন পট্টনায়ক দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মানব-শৃঙ্খল গড়ে তুলে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে’।

বিদ্যুৎ আইন সংশােধনী প্রস্তাবের বিরােধিতায় দেশের ১৫ লাখ কর্মী ও ইঞ্জিনিয়াররা বনধ পালন করেন। তাদের দাবি, ‘সব কর্মীদের জন্য পুরােনাে পেনশন স্কিম কার্যকরী করতে হবে’। অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার্স ফেডারেশনের চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র দুবে জানান, ‘বিদ্যুৎ সেক্টরের দশ লক্ষের বেশি কর্মী ও ইঞ্জিনিয়াররা বনধ সফল করেছে’।

রাজধানীর সাহিদ পার্কে কয়েক হাজার প্রতিবাদকারী জমায়েত করেন। তারপর মিছিল করে আইটিও দিকে এগিয়ে গিয়ে বাহাদুর শাহ জফর মার্গের একটা অংশে অবরােধ দেখান। শ্রমিক ইউনিয়নের লাল পতাকা নিয়ে তারা স্লোগান দেন, ‘ছাত্রদের ওপর হামলা বন্ধ কর’, ‘আমাদের দেশ ভারতবর্ষ’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা বন্ধ কর’, নাগরিকপঞ্জি, নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার মেনে নেওয়া হবে না’।

কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) কর্মীরা পাটনা-অরা জাতীয় সড়ক অবরােধ করলে শয়ে শয়ে গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়ে। ভারত বনধে সিপিআই (এম) কর্মীরা টায়ার পােড়ান। কেন্দ্রের শ্রমিক বিরােধী নীতির কারণে তারা স্লোগান দেন।

সিআইটিইউ, এআইইউটিইউসি, এইচএমএস, এসইডরএ, এআইটিইউসি, এলপিএফ, ইউটিইউসি, এআইসিসিটিইউ, আইএনটিইউসি, টিইউসিসি চোদ্দ দফা দাবিতে সােচ্চার হয়ে ভারত বনধের ডাক দিয়েছিল। কংগ্রেস, শিবসেনা, এমডিএমকে, ডিএমকে ভারত বনধকে সমর্থন করেছে। উত্তরপ্রদেশে কড়া সকর্তা জারি করা হয়েছিল। শ্রমিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন, লাইফ ইনস্যুরেন্স, বিএসএনএল, ডাক কর্মীরা ভারত বনধ সমর্থন করেন।

অন্ধ্রপ্রদেশে পুলিশ বামদলগুলির নেতা ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলাের নেতাদের গ্রেফতার করেছে- মুলত অঙ্গোলে, বিশাখাপত্তনম, বিজয়ওয়াড়া, গুন্টুর, কাড়াপায় বনধ সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয়। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসােসিয়েশনের তরফে জানানাে হয়, দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের পাঁচটি ব্যাঙ্ক ইউনিয়নের কর্মীরা শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ভারত বনধে সামিল হয়েছেন। ফলে দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক পরিষেবা ব্যাহত হয়। তবে লক্ষণীয়, অন লাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়নি।

অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসােসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কো-অপােরটিভ ব্যাঙ্ক, আরআরবি, লাইফ ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন, জেনারেল ইনস্যুরেন্স সেক্টর ভারত বনধে যােগ দেবে।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মােদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশে মানুষ বিরােধী ও শ্রমিক বিরােধী নীতি গ্রহণ করেছে। বেকারত্বের হার বেড়ে চলেছে। আর্থিক উন্নয়নের গতি হাস পেয়েছে। মােদির শিল্পপতি বন্ধুদের দৌলতে ছােটো কোম্পানিগুলি তাদের জিনিষ বিক্রি করতে পারছেন না। ২৫ কোটি শ্রমিককে ভারত বনধ ডাকার জন্য কুর্নিশ জানাই’।

কংগ্রেস নেতা কপিল সিবল বলেন, ‘দেশের ব্যবসায়ীরা ভারত বনধ ডেকেছেন, কেননা জিএসটি ফাঁদে তাদের ব্যবসা। লােকসানের মুখে দেখছে। ব্যবসায়ীদের একটা অংশ প্রান্তিক, তারা খুব স্বল্প লাভে ব্যবসা করেন। জিএসটি’র ফাঁদে তারা সমস্যায় পড়েছেন’। এলজেডি নেতা শরদ যাদব বলেন, ‘কেন্দ্রের সরকার অ-সাংবিধানিক, দলিত বিরােধী, পিছিয়ে পড়া শ্রেণা বিরােধী, সংখ্যালঘু বিরােধী, জন মানুষ বিরােধী। দেশে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরে সবথেকে বেশি- যার নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রের ভুল নীতি।